এখন আমরা যদি বিশ্বাস করি যে মহাবিশ্ব এলােমেলােভাবে নয় বরং চলছে। কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে, তাহলে
এই আংশিক সূত্রগুলােকে অবশ্যই একটি পূর্ণাঙ্গ একীভূত তত্ত্বে রূপদান করতে
হবে, যা ব্যাখ্যা দেবে মহাবিশ্বের সব কিছুর । কিন্তু এ রকম একটি
একীভূত তত্ত্বের সন্ধানে নামলে
একটি সঙ্কটের মুখে
পড়তে হয় । ওপরে উল্লিখিত বিজ্ঞানের এই চিন্তা ভাবনাগুলােতে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে আমরা বুদ্ধিমান জীব, যারা স্বাধীনভাবে মহাবিশ্বকে দেখছি
ও তা থেকে
সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। যদি এটা সঠিক হয়ে
থাকে, তাহলে আমরা
উন্নতি করতে করতে
একদিন মহাবিশ্বের কার্যকরী নিয়মগুলাের কাছাকাছি পৌছতে পারব
বলে মনে করা খুবই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে, এমন কোনাে পূর্ণাঙ্গ একীভূত সূত্র যদি থাকেই
তবে সেটি নির্ধারণ করবে আমাদের নিজেদের কাজকর্মও। তার মানে তত্ত্ব নিজেই
এর অনুসন্ধানের ফলাফল নির্ধারণ করবে। তাহলে
সেই তত্ত্ব কেন এটাই নির্ধারণ করবে যে আমরা সঠিক
সিদ্ধান্তে পৌছব? সেটা
তাে আমাদের জন্য
এটাও নির্ধারণ করে রাখতে পারে যে আমরা ভুল সিদ্ধান্তে পৌছব, তাই না? অথবা এমনও হতে পারে, এটি নির্ধারণ করে রাখবে যে আমরা কোনাে সিদ্ধান্তেই পৌছতে পারব না!
এই সমস্যার জবাব দেওয়ার জন্যে আমাদের মাথায় ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের (Natural selection) নীতি ছাড়া
আর কিছু আসছে।
এই নীতি অনুসারে, স্বপ্রজননে সক্ষম প্রাণীদের নিজেদের মধ্যে
জিনগত উপাদান ও বেড়ে ওঠার মধ্যে
কিছু পার্থক্য থাকবে। এই পার্থক্যের কারণে এদের কেউ কেউ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ও সেই অনুসারে কাজ করতে অন্যদের চেয়ে বেশি দক্ষ
হয়ে উঠবে । অন্যদের চেয়ে এদের
টিকে থাকা ও সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা হবে বেশি। ফলে এদের আচরণ ও চিন্তাই হবে প্রভাবশালী। অতীতে এটাই সত্য
হয়ে এসেছে এবং এই বুদ্ধিও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার টিকে থাকার
ক্ষেত্রে একটি সুবিধা প্রদান করেছে। নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে এটাই এ ক্ষেত্রেও হচ্ছে। আমাদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলাে আমাদের ধ্বংসের কারণও হয়ে যেতে
পারে। আর যদি তা নাও হয়,
একটি পূর্ণাঙ্গ একীভূত তত্ত্ব হয়তাে আমাদের টিকে থাকার সম্ভাবনায় খুব বেশি পরিবর্তন আনবে না। অবশ্য
মহাবিশ্ব যদি একটি
নিয়ম মেনে তৈরি
হয়ে থাকে, তাহলে
আমরা আশা করতে
পারি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত আমাদের বুদ্ধি পূর্ণাঙ্গ একীভূত তত্ত্ব অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও আমাদের সহায় হবে, যাতে
আমরা ভুল সিদ্ধান্তের দিকে চলে না যাই।
অতিরিক্ত চরম কিছু অবস্থার কথা বাদ দিলে
আমাদের বর্তমান আংশিক
তত্ত্বগুলাে সব ক্ষেত্রেই পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। এ কারণে বাস্তব জগতের কথা ভাবলে
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত তত্ত্বের সন্ধান করাকে অযৌক্তিক মনে হয়।
উল্লেখ্য যে, একই রকম যুক্তি আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিপক্ষেও তােলা যেত, কিন্তু এই তত্ত্বগুলাে আমাদের জন্য নিউক্লিয়ার শক্তি ও মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স বিপ্লব সম্ভব
করেছে।
কাজেই, একীভূত তত্ত্ব মানব
প্রজাতিকে টিকে থাকার
ব্যাপারে সাহায্য করবে-এমনটি বলা যাচ্ছে না। এটি হয়তাে আমাদের লাইফস্টাইলে কোনাে প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু সভ্যতার শুরু থেকেই দেখা
গেছে, মানুষ বিভিন্ন ঘটনাকে সম্পর্কহীন ও ব্যাখ্যাতীত মনে করে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি । আমরা জগতের
অন্তর্নিহিত রহস্য জানার
জন্য অধীর থেকেছি। আজও আমরা
জানতে উৎসুক, আমরা
কেন এখানে আছি এবং কোথা থেকেই
বা এসেছি। গভীর জ্ঞান পিপাসাই আমাদের অবিরত অনুসন্ধান চালিয়ে যাবার পেছনে
একটি যৌক্তিক কারণ। আমরা যে মহাবিশ্বে বাস করি তার একটি সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়ার চেয়ে
ছােট নয় আমাদের উদ্দেশ্য।
নােট-
১. যেমন আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি
অব রিলেটিভিটি বা সার্বিক আপেক্ষিক
তত্ত্ব । ১০০ বছর আগে এর মহাকর্ষ তরঙ্গের পূর্বাভাস ২০১৬ এসে প্রমাণিত
হয়। ফলে এটি ভালাে
তত্ত্ব হিসেবে আরাে
জোরালাে স্বীকৃতি লাভ করে।
২. অধিবিদ্যা (Metaphysics) হলাে দর্শনের একটি
শাখা । অন্য
অনেক কিছুর
মতাে এরও জনক অ্যারিস্টটল । বিশ্বের অস্তিত্ব, আমাদের অস্তিত্ব, সত্যের
ধারণা, বস্তুর গুণাবলি, সময়,
স্থান, সম্ভাবনা ইত্যাদি এর আলােচ্য বিষয়।
৩. অর্থাৎ তাদের মতে নির্দিষ্ট কোনাে সূত্র
প্রয়ােগ করে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা হয়নি,
তাই সেই আদি অবস্থার ব্যাখ্যা দেবার মতাে
কোনাে নির্দিষ্ট সূত্রের ব্যাখ্যা
খোজা অনর্থক।
৪. মহাকর্ষ বল বস্তুদের দূরত্বের ওপরও নির্ভরশীল-এটা ঠিক, কিন্তু দূরত্ব তাে আর বস্তুর নিজস্ব কোনাে
বৈশিষ্ট্য নয়।
৫. কারণ আমরাও তাে মহাবিশ্বেরই একটি অংশ ।
মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য-০২
মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য-০৩
আরো পড়ুন...
মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য-০১মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য-০২
মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য-০৩

No comments
Post a Comment