Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

নিউটনের মহাবিশ্ব - ০১

Thursday, 7 November 2019

/ by Admin
বস্তুর গতি সম্পর্কে আমরা এখন যা জানি তার পেছনে কৃতিত্ব হলাে গ্যালিলিও এবং নিউটনের । তার আগে সবাই বিশ্বাস করত অ্যারিস্টটলের কথার ওপর, যিনি বলেছিলেন যে স্থিরাবস্থায় থাকাই হচ্ছে বস্তুর স্বাভাবিক ধর্ম। বস্তু গতিশীল হবে, যদি এতে কোনাে বল বা ঘাত কাজ করে। সে ক্ষেত্রে হালকা বস্তুর চেয়ে ভারী বস্তুর পতন দ্রুত হবার কথা, কারণ পৃথিবী একে টানবে বেশি বলে। অ্যারিস্টটলপন্থীদের আরেকটি মত ছিল যে, মহাবিশ্বে ক্রিয়াশীল সবগুলাে সূত্র নিছক চিন্তাশক্তি দিয়েই বের করা সম্ভব, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করার কোনাে প্রয়ােজন নেই। ফলে ভিন্ন ওজনের বস্তুরা আসলেই ভিন্ন বেগে পতিত হচ্ছে কি না, তা গ্যালিলিওর আগে কেউ পরীক্ষা করে দেখার প্রয়ােজন অনুভব করেনি।
কথিত আছে, গ্যালিলিও ইতালির পিসার হেলানাে টাওয়ার থেকে ভার নিক্ষেপ করে অ্যারিস্টটলের বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করেন। এই গল্পটি যে অসত্য তা মােটামুটি নিশ্চিত। তবে গ্যালিলিও এ রকমই কিছু একটা করেছিলেন । তিনি একটি মসৃণ ঢালু পথে ভিন্ন ভিন্ন ওজনের বল গড়িয়ে দেন। ওপর থেকে ভারী বস্তুর সােজা নিচে পড়ার মতােই ঘটনাই এখানেও ঘটবে, কিন্তু এখানে গতি অপেক্ষাকৃত কম হওয়ার ফলে পর্যবেক্ষণ করা হবে সহজ।
 গ্যালিলিওর পরিমাপ থেকে বােঝা গেল, ভর যাই হােক না কেন প্রতিটি বস্তুর গতি একই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন ধরুন, কোনাে ঢালু পথ দিয়ে একটি বলকে গড়িয়ে পড়তে দিলে আপনি দশ মিটার নামতে নামতে এটি এক মিটার নিচে নামে । তাহলে এক সেকেন্ড সময় পরে এটি সেকেন্ডে এক মিটার বেগে নিচের দিকে নামবে, দুই সেকেন্ড পরে সেকন্ডে দুই মিটার বেগে নামবে ইত্যাদি। বলটির ভর কমবেশি করা হলেও একই ঘটবে। 
হা, সিসা দিয়ে তৈরি একটি বস্তু একটি পালকের চেয়ে দ্রুত পড়বে। কিন্তু তার কারণ হলাে এটাই যে বাতাসের বাধার কারণে পালকের গতি কমে যাচ্ছে। বাতাসের বাধার অনুপস্থিতিতে আপনি যদি সিসারও আলাদা ভরের দুটি বস্তুকে নিচে পড়তে দেন, তবে দেখা যাবে তারা একই হারে নিচে পড়তে থাকবে (একটু পরই আমরা দেখব, কেন এমন হয়) । চাঁদের বুকে বস্তুর বেগ কমিয়ে দেবার জন্য কোনাে বাতাসের উপস্থিতি নেই।মহাকাশচারী ডেভিড স্কট এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে পালক ও সিসার ভরের।পরীক্ষাটি চালিয়ে দেখেন যে এরা আসলেই একই সাথে ভূমি স্পর্শ করছে।

গ্যালিলিওর এই পরিমাপগুলােই ছিল নিউটনের গতি সূত্রের ভিত্তি । গ্যালিলিওর পরীক্ষা অনুসারে, ঢালু বেয়ে নামার সময় কোনাে বস্তু একটি ফোর্স বা বলের প্রভাবের মধ্যেই থাকে। এই বলের প্রভাবে অবিরাম এর গতি বেড়ে চলে। দেখা গেল যে বলের কাজ শুধু বস্তুকে গতিশীল করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বস্তুর বেগের পরিবর্তন ঘটানােই হচ্ছে বলের সত্যিকারের কাজ, যদিও আগে তা মনে করা হতাে না। এ থেকে আরাে বােঝা গেল, বস্তুর ওপর কোনাে বল ক্রিয়াশীল না হলে এটি একই বেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে। 
সর্বপ্রথম ১৬৮৭ সালে এই ধারণা স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশিত হলাে। নিউটনের প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকায় প্রকাশিত এই কথাই এখন নিউটনের প্রথম সূত্র হিসেবে পরিচিত। এর বক্তব্য হচ্ছে, কোনাে বস্তু এর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতে ত্বরিত হবে তথা গতির পরিবর্তন করবে। 
যেমন- বল যদি দ্বিগুণ হয় তাহলে ত্বরণ (বেগের পরিবর্তন) দ্বিগুণ হবে । বস্তুর ভর যত বেশি হবে ত্বরণ আবার সেই হারে কম হবে। (একই বল দ্বিগুণ ভরের কোনাে বস্তুর ওপর কাজ করলে অর্ধেক তুরণ তৈরি করবে। এ ক্ষেত্রে গাড়ি একটি পরিচিত উদাহরণ। ইঞ্জিন যত শক্তিশালী হবে, এর ত্বরণও হবে তত বেশি। কিন্তু আবার গাড়ি যত বেশি ভারী হবে, একই বল এতে তত কম ত্বরণ উৎপন্ন করতে সক্ষম হবে।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD