
আমরা সবাই জানি বা বলি পৃথিবী গোলাকার ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সময়েও এমন মানুষ খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যেত, যারা ভাবত পৃথিবী সমতল। এমনকি আজকের দিনেও এমন কিছু লােক খুঁজে পাওয়া যাবে । তবু আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার শুরু কিন্তু সেই গ্রিকদের আমলেই । খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩৪০ বছর আগে অ্যারিস্টটল On the Heavens (বাংলায় বলা চলে মহাকাশ প্রসঙ্গ) নামে একটি বই লিখেন। বইটিতে তিনি থালার মতাে চ্যাপ্টা পৃথিবীর বদলে গােলক আকৃতির পৃথিবীর সপক্ষে কিছু ভালাে যুক্তি তুলে ধরেন।
একটি যুক্তি ছিল চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে। অ্যারিস্টটল বুঝতে পেরেছিলেন, পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝে এসে পড়লে চন্দ্রগ্রহণ হয়। এ অবস্থায় চাঁদে পৃথিবীর ছায়া পড়ার কারণে গ্রহণটি ঘটে। অ্যারিস্টটল দেখলেন, পৃথিবীর ছায়া সব সময় গােল হয়ে পড়ে। পৃথিবী যদি চ্যাপ্টা চাকতি বদলে গােলকের মতাে হয়, তবেই কেবল এমনটা সম্ভব । পৃথিবী যদি চাকতির মতাে সমতল হতাে, তবে গােল ছায়া শুধু তখনই পড়ত যখন সূর্য চাকতির ঠিক কেন্দ্র বরাবর থাকত। অন্য সময় ছায়া লম্বা হয়ে উপবৃত্তের মতাে হয়ে যেত (একটি বৃত্তকে একদিকে টেনে লম্বা করে দিলে যে আকৃতি পাওয়া যায় সেটিই হলাে উপবৃত্ত)।
পৃথিবীর আকৃতি গােলকীয় হবার পক্ষে গ্রিকদের আরেকটি যুক্তি ছিল । পৃথিবী যদি সমতল হতাে, তবে দূর থেকে আসা কোনাে জাহাজকে দিগন্তের কাছে একটি ছােট্ট ও সাধারণ বিন্দু হিসেবে দেখা যেত। এরপর ক্রমেই কাছে আসতে থাকলে এর আরাে খুঁটিনাটি যেমন পাল, কাঠামাে ইত্যাদি দেখা যেত। কিন্তু বাস্তবে এমন হয় না । জাহাজ আসার সময় দিগন্তের দিকে তাকালে আমরা সবার আগে দেখি জাহাজের পাল। এর আরাে অনেকক্ষণ পরে চোখে পড়ে এর মূল কাঠামাে । জাহাজের লম্বা মাস্তুল এর মূল কাঠামাে থেকে অনেক উঁচুতে থাকায় সবার আগে একে দিগন্তে উঁকি দিতে দেখা যায়। এ থেকে প্রমাণ হয়, পৃথিবীর আকৃতি গােলকের মতাে (সমতল নয়) ।পৃথিবীর আকৃতি গােলকীয় হবার কারণে দিগন্ত থেকে আসা জাহাজের পাল ও মাস্তুল এর মূল কাঠামাের আগে চোখে পড়ে ।
রাতের আকাশের ব্যাপারেও গ্রিকরা দারুণ উৎসাহী ছিল । অ্যারিস্টটলের সময় থেকেই কয়েক শতক ধরে মানুষ রাতের আকাশের আলােগুলাের চলাচলের তথ্য লিখে রাখত । তারা দেখল, আকাশজুড়ে হাজার হাজার আলাের সবাই একই সাথে চললেও এদের পাঁচজন (চাঁদ বাদে) এই নিয়ম মানছে না। কখনাে এরা নিয়ম মাফিক পূর্ব-পশ্চিম পথে চলতে থাকে, কখনাে আবার যেতে থাকে উল্টো দিকে। এই আলােগুলাের নাম দেওয়া হলাে প্ল্যানেট বা গ্রহ’ (Planet) । ইংরেজি প্ল্যানেট শব্দটি গ্রিক ভাষায় যাযাবর বােঝাতে ব্যবহৃত হয়। গ্রিকদের চোখে শুধু পাঁচটি গ্রহই ধরা পড়েছিল, কারণ আমরা খালি চোখে বাকি গ্রহদের দেখতে পাই না। আমরা খালি চোখে দেখি বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিকে। বর্তমানে আমরা জানি, গ্রহরা কেন এই অদ্ভুত পথে চলে। আমাদের সৌরজগতের সাপেক্ষে নক্ষত্রদেরকে প্রায় স্থির বলা চলে কিন্তু গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এ কারণে রাতের আকাশে গ্রহদের চলাচলের পথ দূরবর্তী নক্ষত্রদের তুলনায় অনেক জটিল ।
No comments
Post a Comment