Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব-০১

Wednesday, 20 November 2019

/ by Admin

চাঁদহীন পরিষ্কার রাতের আকাশের দিকে তাকালে সবার আগে আপনার চোখে পড়তে পারে শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ। এ ছাড়া থাকবে অনেক অনেক নক্ষত্র। এ নক্ষত্ররা বাস্তবে আমাদের সূর্যের মতাে হলেও আমাদের থেকে বহু দূরে অবস্থিত । আমরা এদেরকে স্থির ধরে নিলেও পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কক্ষপথের বিভিন্ন অবস্থানে থাকার সময় এদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন হতে দেখা যায়। বাস্তবে কিন্তু এরা মােটেই স্থির নয়। আসলে এদের মধ্যে যারা তুলনামূলকভাবে আমাদের কাছে, তাদের নড়াচড়াই শুধু আমরা টের পাই । পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে বলে আমাদের নিকটবর্তী তারকারা আরও দূরের তারকাদের সাপেক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করে। একটি উন্মুক্ত রাস্তা দিয়ে চলার সময় দূরের দৃশ্যপটের তুলনায় কাছাকাছি থাকা গাছগুলাের আপাত অবস্থান পরিবর্তনের সাথে একে তুলনা করা যায়। যে গাছগুলাে যত কাছে, তারা অবস্থান তত বেশি বদলে যাচ্ছে বলে মনে হয়। অবস্থানের এই আপাত পরিবর্তনকে বলা হয় প্যারালাক্স (নিচের চিত্র ১৪ দেখুন)। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এর মাধ্যমে (প্যারালাক্স) এই নক্ষত্রদের দূরত্ব সরাসরি বের করতে পারি ।


প্রথম অধ্যায়েই আমরা বলেছি, (সূর্যের পরে) আমাদের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি প্রায় চার আলােকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বটি ২৩ লক্ষ কোটি মাইলের সমান। আমরা খালি চোখে যেসব তারা দেখি তাদের অধিকাংশই আমাদের কয়েক শ আলােকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত। সে তুলনায় আমাদের সূর্য মাত্র ৮ আলােক মিনিট দূরে (আলাে আট মিনিটে যত দূর যায়) আছে । দৃশ্যমান তারকাদেরকে পুরাে আকাশে ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও একটি পট্টির মতাে অংশে এদের সংখ্যা খুব বেশি। এর নাম মিল্কিওয়ে। ১৭৫০ সালের দিক থেকেই কিছু জ্যোতির্বিদ বলছিলেন যে মিল্কিওয়েকে এ রকম দেখা যাওয়ার কারণ সম্ভবত এই যে, দৃশ্যমান তারাদের অধিকাংশ একটি চাকতির মতাে বিন্যাসের মধ্যে অবস্থান করছে । এটি হচ্ছে বর্তমান সর্পিল ছায়াপথের (spiral galaxy) একটি উদাহরণ।

চিত্র : প্যারালাক্স বা লম্বন। রাস্তা দিয়ে চলুন, অথবা মহাশূন্যে-আপনার চলার সাথে সাথে কাছের এবং দূরের বস্তুর আপেক্ষিক অবস্থান বদলে যায়। এই পরিবর্তন কাজে লাগিয়ে বস্তুর আপেক্ষিক দূরত্ব বের করা যায় ।


কয়েক দশক পরে জ্যোতির্বিদ স্যার উইলিয়াম হার্শেল এই ধারণা নিশ্চিত করেন। এ কাজ করতে তাঁকে অমানুষিক পরিশ্রম করে বহু নক্ষত্রের অবস্থান ও দূরত্বের তালিকা তৈরি করতে হয়েছিল । তবু এই ধারণা পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি পেল মাত্র বিংশ শতকের শুরুর দিকে। বর্তমানে আমরা জানি, আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের ব্যাস প্রায় ১ লাখ আলােকবর্ষ । এটি ধীরে ধীরে আবর্তনও করছে । এর সর্পিল বাহুতে থাকা নক্ষত্রগুলাে কয়েক শ মিলিয়ন বছরে একবার এর কেন্দ্রের চারদিকে ঘুরে আসে। আমাদের সূর্য একেবারেই সাধারণ মানের একটি নক্ষত্র। মাঝারি আকারের হলুদ এই নক্ষত্রটি ছায়াপথের একটি সর্পিল বাহুর ভেতরের দিকের প্রান্তে অবস্থিত। এটা নিশ্চিত যে অ্যারিস্টটল ও টলেমির সময় থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা তাে তখন পৃথিবীকেই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে বসিয়ে রেখেছিলাম!


মহাবিশ্বের আধুনিক ধারণার সূচনা ঘটে মাত্র ১৯২৪ সালে, আমেরিকান জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবলের হাত ধরে। তিনি দেখালেন যে মিল্কিওয়েই একমাত্র ছায়াপথ (গ্যালাক্সি) নয়। তিনি (টেলিস্কোপের মাধ্যমে) আরও অনেকগুলাে ছায়াপথ খুঁজে পেলেন, যাদের মাঝে আছে বিশাল ফাকা স্থান । এসব ছায়াপথের উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্যে পৃথিবী থেকে এদের দূরত্ব বের করা প্রয়ােজন । সমস্যা হলাে এরা এত দূরে দূরে অবস্থিত যে আমাদের নিকটস্থ তারকাদের মতাে এদের কোনাে নড়াচড়া চোখে পড়ে না, দেখতে একেবারেই স্থির মনে হয়। তাই এদের দূরত্ব মাপতে প্যারালাক্স কোনাে কাজে আসল না। ফলে আশ্রয় নিতে হলাে পরােক্ষ উপায়ের ওপর। নক্ষত্রের দূরত্ব সম্পর্কে একটি স্পষ্ট তথ্য হলাে এর উজ্জ্বলতা। কিন্তু নক্ষত্রের আপাত উজ্জ্বলতা (আমরা একে যত উজ্জ্বল দেখি) শুধু এর দূরত্বের ওপরই নির্ভর করে না, এটি কতটুকু আলাে বিকিরণ করছে (দীপ্তি) তার ওপরও নির্ভর করে। নিকটে অবস্থিত একটি অনুজ্জ্বল তারাও দূরের যেকোনাে ছায়াপথের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের চেয়ে উজ্জ্বল দেখাবে । তাই আপাত উজ্জ্বলতা থেকে দূরত্ব বের করতে হলে নক্ষত্রের দীপ্তিও জানা চাই । নিকটস্থ তারকাদের ক্ষেত্রে প্যারালাক্স কাজে লাগিয়ে দূরত্ব বের করে ফেলা যায় বলে আপাত উজ্জ্বলতা থেকেই এদের দীপ্তি বের করা যায় ।


হাবল দেখলেন, নিঃসৃত আলাের ধরনের ওপর ভিত্তি করে নিকটস্থ নক্ষত্রদেরকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা সম্ভব । একই প্রকারের নক্ষত্রগুলাের দীপ্তি সব সময় একই রকম থাকে। এরপর তিনি যুক্তি দেখালেন যে যদি আমরা দূরের গ্যালাক্সিতেও নিকটস্থ নক্ষত্রদের মতাে একই ধরনের নক্ষত্র খুঁজে পাই তবে আমরা ধরে নিতে পারি তাদের দীপ্তিও একই হবে । এই তথ্য কাজে লাগিয়ে আমরা সেই গ্যালাক্সির দূরত্বও বের করতে পারি। এভাবে একই গ্যালাক্সির অনেকগুলাে নক্ষত্রের দূরত্ব বের করে যদি আমরা সব সময় একই দূরত্ব পাই, তবে ভরসা রাখতে পারি যে হিসাব ঠিক আছে। এই উপায় অবলম্বন করে হাবল নয়টি আলাদা গ্যালাক্সির দূরত্ব বের করতে সক্ষম হন।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD