Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণার ক্রমবিকাশ-০৩

Monday, 4 November 2019

/ by Admin

উপবৃত্তাকার কক্ষপথের মাধ্যমে কোপার্নিকাসের মডেল উন্নত হলেও কেপলার নিজে একে চূড়ান্ত মনে করতেন না। এর কারণ ছিল প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর কিছু বদ্ধমূল ধারণা, যেগুলােকে তিনি পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞানের চেয়ে শক্তিশালী মনে করতেন। অ্যারিস্টটলের মতাে তিনিও মনে করতেন উপবৃত্তর চেয়ে বৃত্তের কম সুন্দর । তাঁর মতে, এমন ত্রুটিপূর্ণ পথে গ্রহদের চলার বিষয়টি বিশ্রী লাগছে, যা চূড়ান্ত সত্য হতে পারে না। এই ধারণা অবিশ্বাস করার পেছনে তাঁর আরেকটি কারণ ছিল। তাঁর মতে, গ্রহরা সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সূর্যের চৌম্বক বলের কারণে, যার ফলাফল উপবৃত্তাকার পথের সাথে মেলে না। যদিও তিনি ভুল করে গ্রহদের কক্ষপথের জন্য চৌম্বক বলকে দায়ী করেছেন, তবুও আমরা তাঁকে এর পেছনে কোনাে বলের উপস্থিতি থাকার বিষয়টি বুঝতে পারার জন্য কৃতিত্ব দিতে পারি । এর আরাে অনেক পরে, ১৬৮৭ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন সূর্যের চারদিকে গ্রহদের কক্ষপথের সঠিক ব্যাখ্যা দেন। এটি প্রকাশিত হয় ফিলােসােফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা (Philosophiae Naturalis Principia Mathematica) প্রবন্ধে। সম্ভবত এটিই পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক অবদান।

প্রিন্সিপিয়াতে নিউটনের একটি সূত্রের বক্তব্য ছিল, কোনাে বল কাজ করার আগ পর্যন্ত সকল স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে। এতে তিনি আরাে দেখালেন যে বলের প্রভাবে কীভাবে একটি বস্তু চলতে শুরু করে বা গতির পরিবর্তন করে। তাহলে গ্রহরা সূর্যের চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে চলে কেন? নিউটনের মতে, এর পেছনে দায়ী হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বল। তাঁর মতে, এই একই বলের কারণে ওপরে নিক্ষিপ্ত বস্তু ভূমিতে ফিরে আসে। তিনি এই বলের নাম দিলেন মহাকর্ষ বা গ্র্যাভিটি (Grvaity)। নিউটনের আগে gravity শব্দটি মেজাজের রুক্ষতা বা ওজনের গুণ হিসেবেই শুধু ব্যবহৃত হত।

এ ছাড়া মহাকর্ষ বা অন্য কোনাে বলের প্রভাবে বস্তুর কী প্রতিক্রিয়া হয় তাও তিনি গাণিতিকভাবে বের করে ফেললেন। সমাধান করলেন উদ্ভূত সমীকরণগুলাে। এভাবে তিনি দেখাতে সক্ষম হলেন যে সূর্যের মহাকর্ষের ফলেই পৃথিবী ও অন্য গ্রহরা উপবৃত্তাকার পথে চলে । এটি মিলে গেল। কেপলারের বক্তব্যের সাথে । নিউটনের মতে, এই সূত্র মহাবিশ্বের সব কিছুর জন্যই প্রযােজ্য, তা চাই পড়ন্ত আপেল হােক অথবা গ্রহ বা নক্ষত্রই হােক। ইতিহাসে এই প্রথম কেউ গ্রহদের গতির এমন ব্যাখ্যা দিলেন, যা পৃথিবীর গতিও নিয়ন্ত্রণ করে। আধুনিক পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার এখানেই পথচলা শুরু।
টলেমির গােলকীয় ধারণা বাদ দিলে মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক কোনাে সীমানা (সর্ববহিঃস্থ গােলক) আছে বলে মনে করার আর কোনাে কারণ। বাকি ছিল না। অন্যদিকে যেহেতু দেখা যাচ্ছে যে রাতের আকাশের নক্ষত্ররা শুধু পৃথিবীর আবর্তনের কারণে আকাশের অবস্থান ঘুরে যাবার ফলেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বােঝা গেল, এরাও সূর্যের মতােই বস্তু কিন্তু অনেক দূরে অবস্থিত । আমরা শুধু পৃথিবীকেই। মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে সরাইনি, বরং সূর্য এমনকি সৌরজগৎও যে মহাবিশ্বের বিশেষ কোনাে অংশ হতে পারে-এমন ধারণাও বাদ দিয়েছি । মতের এই পরিবর্তনের সাথে চিন্তার জগতেও বড় একটি পরিবর্তন সাধিত হয়। মহাবিশ্ব সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞানেরও সূচনা এখানেই।

নােট-
১. পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তনের কারণে রাতের আকাশের তারাদের প্রতি রাতেই পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে দেখা যায়। আবার সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের কারণে প্রতি রাতের কোনাে নির্দিষ্ট সময়ে কোনাে তারাকে আগের রাতের চেয়ে একটু পশ্চিমে দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে কোনাে তারাকে আগের দিনের চেয়ে প্রায় চার মিনিট আগে একই জায়গায় দেখা যায় । এভাবে চলতে চলতে এক বছর পর একটি তারাকে আবার একই সময়ে আগের জায়গায় দেখা যায় । কিন্তু গ্রহরা এ রকম নির্দিষ্ট কোনাে চক্র মেনে চলে না । একেকটি রাত আসতে আসতে এদেরকে কখনাে পশ্চিমে আবার
কখনাে পুবে সরতে দেখা যায় ।
২. অনেকগুলাে ছােট-বড় পুতুলকে সাইজ অনুসারে একটিকে ক্রমান্বয়ে আরেকটির ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হলে একে নেস্টিং ডল বলে ।
৩. পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করায় রাতের আকাশের তারাদের পশ্চিমে যাচ্ছে বলে মনে হয় । নক্ষত্রদের আরাে নানা রকম গতি থাকলেও এরা বহু দূরে থাকায় সেসব গতির ফলাফল আমাদের চোখে কয়েক শ বছরেও ধরা পড়ে না ।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD