Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব-০৫

Saturday, 23 November 2019

/ by Admin

এই মহাজাগতিক নয়েজের উৎস কী তাহলে? পেনজিয়াস ও উইলসন যখন তাদের ডিটেকটরের নয়েজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন তার প্রায় একই সময়ে কাছাকাছি এলাকায় আরও দুজন আমেরিকান পদার্থবিদ মাইক্রোওয়েভ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাঁরা হলেন প্রিনস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বব ডিক ও জিম পিবলস। তাঁরা জর্জ গ্যামাের (যিনি একসময় অ্যালেক্সান্ডার ফ্রিডম্যানের ছাত্র ছিলেন) একটি প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছিলেন। প্রস্তাবনাটি ছিল যে আদি মহাবিশ্ব নিশ্চয় খুব বেশি উত্তপ্ত ও ঘন ছিল, যা উত্তপ্ত অবস্থায় সাদা আলােতে জ্বলজ্বল করছিল। ডিক ও পিবলস বললেন, আদি মহাবিশ্বের এই বিকিরণ আমাদের আজও দেখার কথা।

কারণ এর খুব দূরের অংশ থেকে আসা আলাে আমাদের কাছে এইমাত্র এসে পৌছাবে। কিন্তু মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে এতে মারাত্মকভাবে লাল সরণ ঘটবে। এর ফলে এটি আমাদের কাছে দৃশ্যমান আলাের বদলে মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ হিসেবে আসবে। ডিক ও পিবলস এই বিকিরণ খোঁজ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এটা জানতে পেরে পেনজিয়াস ও উইলসন বুঝলেন, তাঁরা এটাই পেয়ে গেছেন।

এই অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে পেনজিয়াস ও উইলসন নােবেল পুরস্কার পান বিষয়টি ডিক ও পিবলসের জন্য অবশ্যই একটু কষ্টকর, গ্যামাের কথা আর নাইবা বললাম।

আমরা যেদিকেই দেখি তার সব দিকে মহাবিশ্বকে একই রকম দেখা যায়-এই কথা থেকে প্রথমে মনে হতে পারে আমরা মহাবিশ্বের বিশেষ কোনাে জায়গায় আছি । বিশেষ করে মনে হতে পারে যে আমরা যদি সব গ্যালাক্সিকে আমাদের থেকে দূরে সরতে দেখি তার অর্থ হচ্ছে আমরা নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি । কিন্তু ব্যাখ্যা আছে আরেকটিও। অন্য যেকোনাে গ্যালাক্সি থেকে দেখলেও সব দিকে মহাবিশ্বকে একই রকম দেখাবে। আমরা আগেই বলেছি, এটাই ছিল ফ্রিডম্যানের দ্বিতীয় অনুমান।
দ্বিতীয় অনুমানের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনাে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমাদের হাতে নেই।

কয়েক শ বছর আগে হলে এ ধরনের অনুমান গির্জা মেনে নিত। গির্জার নীতিমালা ছিল যে আমরা মহাবিশ্বের কেন্দ্রের একটি বিশেষ জায়গায় আছি । কিন্তু বর্তমানে প্রায় উল্টো কারণে আমরা ফ্রিডম্যানের অনুমানে বিশ্বাসী । একটু উদার মনােভাব দেখানাে-এই আর কি! অর্থাৎ, যদি মহাবিশ্বকে আমাদের চারদিকে একই রকম মনে হতাে, কিন্তু অন্য কোনাে স্থান থেকে একেক দিকে একেক রকম লাগত, তবে তা বড় একটি ব্যাপার হতাে।
ফ্রিডম্যানের মডেল অনুসারে গ্যালাক্সিরা সরাসরি একে অপরের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে। একটি বেলুনে কিছু দাগ দিয়ে ধীরে ধীরে ফোলানাের সাথে একে তুলনা করা যায়। বেলুন বড় হতে থাকলে যেকোনাে দুটি দাগের দূরত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু প্রসারণের কেন্দ্র বলা যাবে এমন কোনাে বিন্দু নেই।

উপরন্তু বেলুনের ব্যাসার্ধ বাড়ছে বলে বেলুনের যে দাগগুলাে যত দূরে আছে সেগুলাে তত দ্রুত সরতে থাকবে। যেমন ধরুন প্রতি সেকেন্ডে বেলুনের ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ হচ্ছে। আগে যে দুটি দাগ এক। সেন্টিমিটার দূরে ছিল এখন তারা থাকবে দুই সেন্টিমিটার দূরে (বেলুনের পৃষ্ঠের ওপর দূরত্ব মাপলে) । তাহলে এদের আপেক্ষিক বেগ হবে সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার। কিন্তু ধরুন, অপর দুটি দাগ আছে দশ সেন্টিমিটার দূরে। তাহলে এখন তারা থাকবে বিশ সেন্টিমিটার দূরে। সুতরাং, তাদের আপেক্ষিক বেগ হবে সেকেন্ডে দশ সেন্টিমিটার। একইভাবে ফ্রিডম্যানের মডেল অনুসারে, যেকোনাে দুটি গ্যালাক্সির দূরে সরার গতি তাদের দূরত্বের সমানুপাতিক। 

তাই তিনি অনুমান করলেন, কোনাে গ্যালাক্সির লাল সরণ আমাদের থেকে এর দূরত্বের সরাসরি সমানুপাতিক হবে। হাবলও তাই পেলেন। এই মডেলের সাফল্য এবং হাবলের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে তার ভবিষ্যদ্বাণীর পরেও পাশ্চাত্য বিশ্বে এই মডেল দীর্ঘদিন ধরে অজানা থেকে যায়। শেষে ১৯৩৫ সালে আমেরিকান পদার্থবিদ হাওয়ার্ড রবার্টসন ও ব্রিটিশ গণিতবিদ আর্থার ওয়াকার একই রকম মডেল আবিষ্কার করেন। মহাবিশ্বের সুষম প্রসারণ সম্পর্কে হাবলের আবিষ্কারই ছিল তাঁদের আবিষ্কারের ভিত্তি ।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD