বস্তুত সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব ও নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বে গ্রহদের কক্ষপথের পরিমাপ ভিন্ন উপায়ে করা হয়। তবে দুই ক্ষেত্রেই কক্ষপথের পূর্বাভাস প্রায় একই রকম হয়। সবচেয়ে বড়পার্থক্য দেখা যায় বুধ গ্রহের কক্ষপথ হিসাব করতে গিয়ে। এটি সূর্যের নিকটতম গ্রহ হওয়াতে সবচেয়ে বেশি মহাকর্ষীয় টান অনুভব করে। এর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ কিছুটা প্রসারিত । সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে উপবৃত্তের বড় অক্ষটি সূর্যের সাপেক্ষে প্রতি দশ বছরে প্রায় এক ডিগ্রি করে আবর্তন করবে। এই প্রভাব খুবই সামান্য হলেও ১৯১৫ সালের অনেক আগেই(তৃতীয় অধ্যায় দেখুন) এটি জানা গিয়েছিল। আইনস্টাইনের তত্ত্বের পক্ষে এটিও ছিল একটিপ্রমাণ। সাম্প্রতিক সময়ে রেডারের (RADAR) সাহায্যে অন্য গ্রহদেরও কক্ষপথের বিচ্যুতি পরিমাপ করা হয়েছে। দেখা গেছে যে এই পরিমাপের সাথে নিউটনীয় হিসাবের একটু অমিল থাকলেও তা মিলে গেছে সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের পূর্বাভাসের সাথে।
আলােক রশ্মিরাও স্থান-কালের মধ্যে জিওডেসিক পথে চলতে বাধ্য। আর স্থান যেহেতু বেঁকে আছে, তাই আলােকেও সরল পথে চলতে দেখা যাবে না। কাজেই সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের পূর্ভাবাস হলাে, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র আলােকে বাঁকিয়ে দেবে। এই তত্ত্ব অনুসারে অনুসারে, সূর্যের ভরের কারণে এর আশপাশ দিয়ে আসা আলাে ভেতরের দিকে কিছুটা বেঁকে যাবে। এর ফলে দূর থেকে কোনাে তারার আলাে সূর্যের কাছ দিয়ে আসার সময় একটি ছােট্ট কোণে সরে যাবে।
![]() |
চিত্র : বুধ গ্রহের কক্ষপথের বিচ্যুতি
|
বুধ গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘােরার সাথে সাথে এর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের প্রধান (বড়) অক্ষওআবর্তন করতে থাকে, যা ৩৬০,০০০ বছরে একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে।
এ কারণে পৃথিবী থেকে দেখলে তারাটিকে ভিন্ন অবস্থানে দেখা যাবে। অবশ্য তারাটির আলাে যদি সব সময়ই সূর্যের খুব কাছ দিয়ে আসে তাহলে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারব না যে আলাে বিচ্যুত হয়েছে নাকি তারাটিকে সঠিক জায়গায়ই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে বলে পৃথিবী থেকে দেখলে একেক সময় একেক তারা সূর্যের পেছনে চলে যায়। এ সময় অন্যদের তুলনায় এ তারাদের আপাত অবস্থান বদলে যায় ।
![]() |
চিত্র : সূর্যের পাশ-ঘেঁষে আসা আলাের বক্রতা
|


No comments
Post a Comment