Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

স্থানের বক্রতা-০২

Thursday, 14 November 2019

/ by Admin

বস্তুত সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব ও নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বে গ্রহদের কক্ষপথের পরিমাপ ভিন্ন উপায়ে করা হয়। তবে দুই ক্ষেত্রেই কক্ষপথের পূর্বাভাস প্রায় একই রকম হয়। সবচেয়ে বড়পার্থক্য দেখা যায় বুধ গ্রহের কক্ষপথ হিসাব করতে গিয়ে। এটি সূর্যের নিকটতম গ্রহ হওয়াতে সবচেয়ে বেশি মহাকর্ষীয় টান অনুভব করে। এর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ কিছুটা প্রসারিত । সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে উপবৃত্তের বড় অক্ষটি সূর্যের সাপেক্ষে প্রতি দশ বছরে প্রায় এক ডিগ্রি করে আবর্তন করবে। এই প্রভাব খুবই সামান্য হলেও ১৯১৫ সালের অনেক আগেই(তৃতীয় অধ্যায় দেখুন) এটি জানা গিয়েছিল। আইনস্টাইনের তত্ত্বের পক্ষে এটিও ছিল একটিপ্রমাণ। সাম্প্রতিক সময়ে রেডারের (RADAR) সাহায্যে অন্য গ্রহদেরও কক্ষপথের বিচ্যুতি পরিমাপ করা হয়েছে। দেখা গেছে যে এই পরিমাপের সাথে নিউটনীয় হিসাবের একটু অমিল থাকলেও তা মিলে গেছে সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের পূর্বাভাসের সাথে।


আলােক রশ্মিরাও স্থান-কালের মধ্যে জিওডেসিক পথে চলতে বাধ্য। আর স্থান যেহেতু বেঁকে আছে, তাই আলােকেও সরল পথে চলতে দেখা যাবে না। কাজেই সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের পূর্ভাবাস হলাে, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র আলােকে বাঁকিয়ে দেবে। এই তত্ত্ব অনুসারে অনুসারে, সূর্যের ভরের কারণে এর আশপাশ দিয়ে আসা আলাে ভেতরের দিকে কিছুটা বেঁকে যাবে। এর ফলে দূর থেকে কোনাে তারার আলাে সূর্যের কাছ দিয়ে আসার সময় একটি ছােট্ট কোণে সরে যাবে।


চিত্র : বুধ গ্রহের কক্ষপথের বিচ্যুতি


বুধ গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘােরার সাথে সাথে এর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের প্রধান (বড়) অক্ষওআবর্তন করতে থাকে, যা ৩৬০,০০০ বছরে একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে।


এ কারণে পৃথিবী থেকে দেখলে তারাটিকে ভিন্ন অবস্থানে দেখা যাবে। অবশ্য তারাটির আলাে যদি সব সময়ই সূর্যের খুব কাছ দিয়ে আসে তাহলে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারব না যে আলাে বিচ্যুত হয়েছে নাকি তারাটিকে সঠিক জায়গায়ই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে বলে পৃথিবী থেকে দেখলে একেক সময় একেক তারা সূর্যের পেছনে চলে যায়। এ সময় অন্যদের তুলনায় এ তারাদের আপাত অবস্থান বদলে যায় ।


চিত্র : সূর্যের পাশ-ঘেঁষে আসা আলাের বক্রতা


যখন সূর্য পৃথিবী ও দূরবর্তী কোনাে নক্ষত্রের ঠিক মাঝখানে থাকে, তখন এর মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে নক্ষত্র থেকে আসা আলাে বেঁকে যায়। ফলে এর আপাত অবস্থান পাল্টে যায়।


সাধারণত এই প্রতিক্রিয়া খুব সহজে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। কারণ সূর্যের আলাের কারণে এর আশপাশে আকাশের তারাদের দেখা পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যের আলােকে ঢেকে ফেলে বলে এ। সময় তারাদের আলাে দেখা সম্ভব। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল বলে আলাের বিচ্যুতি সম্পর্কে আইনস্টাইনের এই ভবিষ্যদ্বাণী ১৯১৫ সালে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ১৯১৯ সালে ঠিকই সম্ভব হলাে। এই বছর একদল ব্রিটিশ গবেষক (বিজ্ঞানী আর্থার
এডিংটনের নেতৃত্বে- অনুবাদক) আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা গেল আইনস্টাইনের কথা মতােই আলাে বিচ্যুত হচ্ছে। একটি জার্মান তত্ত্ব ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে প্রামণিত হওয়ায় এটি যুদ্ধের পর দুই দেশের সমঝােতার পক্ষে কাজ করে। কিন্তু হাস্যকর ব্যাপার হলাে, এই অভিযানের সময় তােলা ছবিগুলাে পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, যেটুকু প্রতিক্রিয়া তারা পরিমাপ করতে চেয়েছিলেন, তাতে সমান পরিমাণ ভুলও ছিল। পরিমাপের ক্ষেত্রে ভাগ্য তাঁদের সহায়ক ছিল । অথবা বলা যায় যে সম্ভবত তাঁরা যে ফলাফল চাচ্ছিলেন তা আগেই জানতেন বলেই পেয়ে গিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের জগতে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। তবে আলাের বিচ্যুতির ঘটনা কিন্তু পরবর্তীতে অনেকগুলাে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় ।



সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি পূর্ভাবাস হলাে, বড় ভরের বস্তুর আশেপাশে সময়কে ধীরে চলতে দেখা যাবে। যেমন পৃথিবীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটবে । বিষয়টি সর্বপ্রথম আইনস্টাইনের মাথায় আসে ১৯০৭ সালে। এর পাঁচ বছর পরে তিনি বুঝতে পারেন, মহাকর্ষ স্থানের আকৃতিও বদলে দেয়। আরও তিন বছর পর তিনি তত্ত্বটি সম্পূর্ণ করেন। এই প্রতিক্রিয়া বের করতে তিনি তাঁর সমতুল্যতার নীতি (Principle of equivalence) ব্যবহার করেন। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বে আপেক্ষিকতার মৌলিক স্বীকার্য যে ভূমিকা পালন করেছিল, সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে সেই একই ভূমিকা পালন করেছিল এই নীতিটি।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD