আমরা সবাই জানি, কোনাে স্থানের একটি বিন্দুর অবস্থান বােঝানাের জন্য আমরা তিনটি
সংখ্যা বা স্থানাঙ্ক ব্যবহার করি। যেমন আমরা হয়তাে বলতে পারি, কোনাে কক্ষের একটি বিন্দু কোনাে একটি
দেয়াল থেকে ৭ মিটার দূরে আছে, অপর একটি দেয়াল থেকে ৩ মিটার এবং মেঝে থেকে ৫ মিটার ওপরে আছে । অথবা
আমরা বলতে পারি এভাবে-একটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে এবং
সমুদ্র স্তর থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় আছে। আমরা আমাদের সুবিধামতাে যেকোনাে
তিনটি স্থানাঙ্ক ব্যবহার করতে পারি । অবশ্য এই স্থানাঙ্কদের গ্রহণযােগ্যতার একটা
সীমারেখা আছে।
চাদের অবস্থানকে পিকাডিলি সার্কাসের পশ্চিম ও উত্তর এবং সমুদ্র স্তর
থেকে উচ্চতার মাধ্যমে বােঝানাে হলে তা অবশ্যই বাস্তবসম্মত হবে না। এ ক্ষেত্রে বরং
আমরা এ রকম তিনটি স্থানাঙ্ক ব্যবহার করতে পারি :
এক- সূর্য থেকে এর দূরত্ব।
দুই- গ্রহদের কক্ষীয় তল থেকে দূরত্ব এবং
তিন- সূর্য ও চাদের সংযােজক রেখা এবং সূর্য ও কাছাকাছি থাকা অন্য কোনাে নক্ষত্র যেমন প্রক্সিমা সেন্টোরির সংযােজক রেখা দুইটি দ্বারা উৎপন্ন কোণ।
আবার আমাদের গ্যালাক্সিতে সূর্যের অথবা লােকাল গ্রুপে আমাদের গ্যালাক্সির অবস্থান বর্ণনা করতে গেলে এই স্থানাঙ্কগুলােও কাজে আসবে না। সত্যি বলতে পরস্পরকে ছেদ করা অনেকগুলাে দাগের মাধ্যমে আমরা পুরাে মহাবিশ্বের অবস্থান নির্দেশ করতে পারি। সে ক্ষেত্রে একটি বিন্দুর অবস্থান বােঝানাের জন্য প্রতিটি দাগে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানাঙ্ক বসাতে হবে।
তিন- সূর্য ও চাদের সংযােজক রেখা এবং সূর্য ও কাছাকাছি থাকা অন্য কোনাে নক্ষত্র যেমন প্রক্সিমা সেন্টোরির সংযােজক রেখা দুইটি দ্বারা উৎপন্ন কোণ।
আবার আমাদের গ্যালাক্সিতে সূর্যের অথবা লােকাল গ্রুপে আমাদের গ্যালাক্সির অবস্থান বর্ণনা করতে গেলে এই স্থানাঙ্কগুলােও কাজে আসবে না। সত্যি বলতে পরস্পরকে ছেদ করা অনেকগুলাে দাগের মাধ্যমে আমরা পুরাে মহাবিশ্বের অবস্থান নির্দেশ করতে পারি। সে ক্ষেত্রে একটি বিন্দুর অবস্থান বােঝানাের জন্য প্রতিটি দাগে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানাঙ্ক বসাতে হবে।
স্থানের তিনটি মাত্রা (Dimension) আছে বলতে আমরা বুঝি একটি বিন্দুর
অবস্থান নির্দেশ করতে আমরা তিনটি সংখ্যা বা স্থানাঙ্ক ব্যবহার করি। এর সাথে সময়
যােগ করলে স্থান চার মাত্রার স্থান-কালে পরিণত হয়।
নির্দিষ্ট কোনাে স্থান ও সময়ে ঘটা কোনাে ঘটনাকে আপেক্ষিক তত্ত্বের
স্থান-কালে চারটি সংখ্যা বা স্থানাঙ্ক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এখানেও স্থানাঙ্কের
ব্যবহার নির্ভর করে ইচ্ছার ওপর । আমরা সময়ের সাথে স্থানের যেকোনাে তিনটি
সুসংজ্ঞায়িত স্থানাঙ্ক ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে স্থান
ও কালের স্থানাঙ্কের মধ্যে আসলে কোনাে পার্থক্য নেই। স্থানের যেকোনে দুটি
স্থানাঙ্কের মধ্যে যেমন সত্যিকারের কোনাে পার্থক্য থাকে না ব্যাপারটা ঠিক তেমনই।
আমরা চাইলে নতুন একগুচ্ছ স্থানাঙ্ক ব্যবহার করতে পারি। বোন স্থানের প্রথম
স্থানাঙ্কটি বানানাে হবে স্থানের আগের স্থানাঙ্কের প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানাঙ্কের
সমম্বয়ে।
তাহলে পৃথিবীতে কোনাে বিন্দুর অবস্থান বোঝানাের জন্যে জায়গাটি
পিকাডিলি থেকে কত মাইল উত্তরে ও পশ্চিমে আছে তা না বলে আমরা বলতে পারি এটি
পিকাডিলি থেকে কত মাইল উত্তর-পূর্ব ও কত মাই উত্তর-পশ্চিমে আছে। একইভাবে আমরা
সময়ের জন্য নতুন স্থানাঙ্ক ব্যবহার করতে পারি । আগের সময়ের (সেকেন্ডের হিসাবে)
সাথে পিকাডিলির উত্তর দিকের দূরত্ব সমন্বিত করে এটা তৈরি করা যেতে পারে। এই
দূরত্বের একক হতে পারে আলােক সেকেন্ড।
আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি সুপরিচিত ফলাফল হলাে ভর ও শক্তির
সমতুল্যতা। আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc^ এদের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে। এখানে E হল শক্তি, m হলাে ভর এবং c হল আলাের গতিবেগ। অল্প কিছু ভরকে
বিশুদ্ধ তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণে রূপান্তরিত করলে কী পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে তা
বের করতে এই সূত্র খুব বেশি কাজে লাগে । আলাের বেগের মান অনেক বড় একটি সংখ্যা
হওয়ায় পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তর করে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় ।
হিরােশিমা শহরকে ধ্বংস করেছে যে বােমা তাতে ভর ছিল এক আউন্সেরও কম । কিন্তু
সূত্রটি থেকে আমরা আরও জানতে পারছি যে বস্তুর শক্তি বাড়তে থাকলে এর ভরও বেড়ে
যায় । আর ভর বাড়লেই কিন্তু ত্বরণ (বেগ বৃদ্ধি) বাধাপ্রাপ্ত হয়।

No comments
Post a Comment