১৮৮৭ সালে অ্যালবার্ট মাইকেলসন (যিনি পরে প্রথম আমেরিকান হিসেবে পদার্থবিদ্যায়
নােবেল পান) ও এডওয়ার্ড মর্লি নিবিড় যত্নের সাথে একটি কঠিন পরীক্ষা পরিচালনা করেন।
পরীক্ষার স্থান ছিল ক্লিভল্যান্ডের কেইস স্কুল অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স (বর্তমানে এর নাম
কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি)। তারা বুঝতে পারলেন, যেহেতু পৃথিবী এর কক্ষপথে
সূর্যকে কেন্দ্র করে সেকন্ডে প্রায় বিশ মাইল বেগে ঘুরছে, তাহলে তাদের পরীক্ষাগারও ইথারের
মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বেগে ছুটবে। কিন্তু কেউই জানত না কোন দিকে বা কত গতিতে ইথার সূর্যের সাপেক্ষে গতিশীল অথবা আদৌ এটি গতিশীল কি না। কিন্তু বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবী এর কক্ষপথের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে (এবং ভিন্ন দিকে গতিশীল) থাকায় একই পরীক্ষা বারবার করার মাধ্যমে এই অজানা বিষয়টি জেনে ফেলার আশা ছিল। এই উদ্দেশ্যে মাইকেলসন ও মর্লি সাহেব পরীক্ষাটিকে এভাবে সাজালেন-ইথারের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর গতির দিকে (যখন আমরা আলােক উৎসের দিকে গতিশীল) প্রাপ্ত আলাের বেগকে এই গতির সমকোণের দিকে (যখন আমরা উৎসের দিকে গতিশীল নই) আলাের বেগের সাথে তুলনা করতে হবে । বিস্ময়ের সাথে তারা লক্ষ করলেন, উভয় দিকেই আলাের বেগ ঠিক একই!
নােবেল পান) ও এডওয়ার্ড মর্লি নিবিড় যত্নের সাথে একটি কঠিন পরীক্ষা পরিচালনা করেন।
পরীক্ষার স্থান ছিল ক্লিভল্যান্ডের কেইস স্কুল অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স (বর্তমানে এর নাম
কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি)। তারা বুঝতে পারলেন, যেহেতু পৃথিবী এর কক্ষপথে
সূর্যকে কেন্দ্র করে সেকন্ডে প্রায় বিশ মাইল বেগে ঘুরছে, তাহলে তাদের পরীক্ষাগারও ইথারের
মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বেগে ছুটবে। কিন্তু কেউই জানত না কোন দিকে বা কত গতিতে ইথার সূর্যের সাপেক্ষে গতিশীল অথবা আদৌ এটি গতিশীল কি না। কিন্তু বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবী এর কক্ষপথের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে (এবং ভিন্ন দিকে গতিশীল) থাকায় একই পরীক্ষা বারবার করার মাধ্যমে এই অজানা বিষয়টি জেনে ফেলার আশা ছিল। এই উদ্দেশ্যে মাইকেলসন ও মর্লি সাহেব পরীক্ষাটিকে এভাবে সাজালেন-ইথারের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর গতির দিকে (যখন আমরা আলােক উৎসের দিকে গতিশীল) প্রাপ্ত আলাের বেগকে এই গতির সমকোণের দিকে (যখন আমরা উৎসের দিকে গতিশীল নই) আলাের বেগের সাথে তুলনা করতে হবে । বিস্ময়ের সাথে তারা লক্ষ করলেন, উভয় দিকেই আলাের বেগ ঠিক একই!
১৮৮৭ থেকে ১৯০৫ সাল। ইথার তত্ত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা কম করা
হলাে না। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য প্রচেষ্টা ছিল ডাচ পদার্থবিজ্ঞানী
হেনড্রিক লরেন্টজের। তিনি মাইকেলসন-মর্লি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যখ্যা দেবার
জন্য বললেন, ইথারের মধ্য দিয়ে চলার সময় বস্তুর দৈর্ঘ্য ছােট হয়ে যায় ও ঘড়ি
ধীরে চলে । কিন্তু ১৯০৫ সালে সুইশ প্যাটেন্ট অফিসের একজন অখ্যাত ব্যক্তি একটি
বিখ্যাত গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন। ব্যক্তিটি আর কেউ নন, স্বয়ং আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি বললেন, আমরা যদি পরম সময়ের ধারণা বাদ দিতে
রাজি হই, তাহলে ইথারের কোনাে প্রয়ােজনই পড়ে না (আমরা একটু পরই এর কারণ
দেখব)। কয়েক সপ্তাহ পরে বিখ্যাত ফরাসি গণিতবিদ অঁরি পয়েনকেয়ার একই রকম কথা
বললেন । পয়েনকেয়ারের চেয়ে আইনস্টাইনের যুক্তিগুলাে পদার্থবিদ্যার মূলনীতির বেশি
কাছাকাছি ছিল। পয়েনকেয়ার সমস্যাটিকে নিতান্তই গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছিলেন।
এমনকি তিনি তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্তও আইনস্টাইনের ব্যাখ্যা মেনে নেননি।
আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্যে বললেন, যেকোনাে বেগে মুক্তভাবে গতিশীল সকল
পর্যবেক্ষকের জন্য বিজ্ঞানের সূত্রগুলাে একই থাকবে । নিউটনের গতি সূত্রের জন্যও
এটি সঠিক ছিল । কিন্তু আইনস্টাইন একে আরেকটু লম্বা করে এতে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বও
নিয়ে এলেন। অন্য কথায়, যেহেতু ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব বলছে আলাের বেগের একটি নির্দিষ্ট মান
আছে, অতএব মুক্তভাবে গতিশীল সকল পর্যবেক্ষক এই একই মান পাবেন। এ ক্ষেত্রে
তারা কত বেগে উৎস থেকে দূরে যাচ্ছেন বা কাছে আসছেন তা মােটেই বিবেচ্য নয়। এই সাধারণ
বক্তব্যের মাধ্যমে ইথার বা অন্য কোনাে পছন্দনীয় প্রসঙ্গ কাঠামাের
ব্যবহার করা ছাড়াই ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের অর্থ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব
হলাে। এর অনেকগুলাে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ছিল
স্বাভাবিক বুদ্ধির বিপরীত।
যেমন, সকল পর্যবেক্ষক যদি আলাের বেগ একই মাপেন তাহলে আমদেরকে সময়ের ধারণা
পাল্টে ফেলতে হয়। গতিশীল ট্রেনের কথা আবার একটু ভাবুন। চতুর্থ অধ্যায়ে আমরা
দেখেছি, কেউ ট্রেনের মধ্যে পিং-পং বলকে ওপরে ও নিচে বাউন্স করিয়ে এদেরকে
মাত্র কয়েক ইঞ্চি নড়তে দেখলেও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানাে কেউ বলটিকে প্রায় চল্লিশ
মিটার যেতে দেখবে। একইভাবে ট্রেনে থাকা পর্যবেক্ষক কোনাে আলাে জ্বালালে আলাের
অতিক্রান্ত দূরত্ব সম্পর্কেও দুই পর্যবেক্ষক ভিন্ন মত দেবেন।
আমরা জানি,দূরত্বকে সময় দ্বারা ভাগ দিলে বেগ পাওয়া যায়। তাহলে তাদের দুজনের
মাপা দূরত্ব যদি ভিন্ন হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের উভয়ের পরিমাপকৃত আলাের বেগ একই হতে হলে তাদের
দুজনের মাপা সময়ও ভিন্ন হতে হবে । অর্থাৎ, আপেক্ষিক তত্ত্ব আমাদের মাথা থেকে পরম সময়ের ভাবনা সরিয়ে ফেলতে
চায়। বরং প্রত্যেক পর্যবেক্ষক তাঁর ঘড়িতে সময়ের জন্য নিজস্ব একটি মান পাবেন।
একই রকম ঘড়ি দিয়ে সময় মেপেও অন্য কেউ একই মান নাও পেতে পারেন।
আপেক্ষিক তত্ত্ব মেনে নিলে ইথার নামক কোনাে কিছুর উপস্থিতির
প্রয়ােজনই নেই। মাইকেলসন-মর্লি পরীক্ষায় এই ইথারের কোনাে অস্তিত্ব ধরা পড়েনি।
বরং আপেক্ষিক তত্ত্বের দাবি হলাে, স্থান ও কাল সম্পর্কে আমাদের মৌলিক ধারণাটিই পাল্টে ফেলতে হবে।
আমাদেরকে মেনে নিতে হবে যে কাল’ স্থান থেকে একেবারে আলাদা ও স্বতন্ত্র নয়। দুটো একত্রে মিলেমিশে
তৈরি করেছে স্থান-কাল নামে একটি জিনিস। এই ধারণাগুলাে বুঝে নেওয়া একটু কঠিনই বটে।
পদার্থবিজ্ঞানীরাও আপেক্ষিক তত্ত্বকে মেনে নিতে অনেকগুলাে বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন।
আইনস্টাইন আগেভাগেই এটি বুঝে ফেলার মাধ্যমে তাঁর উন্নত কল্পনাশক্তির পরিচয়
দিয়েছিলেন। নিজের যুক্তির প্রতি আত্মবিশ্বাস তাঁকে সেই যুক্তিগুলাের ফলাফল বের
করতে উদ্বুদ্ধ করে, যদিও সেই ফলাফল নিয়ে যাচ্ছিলে অদ্ভুত কিছু সিদ্ধান্তের দিকে।

No comments
Post a Comment