Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

আপেক্ষিক তত্ত্ব-০১

Sunday, 10 November 2019

/ by Admin
ড্যানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড্যানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ওলে ক্রিস্টেনসেন রােমা (Ole Christensen Roemer) ১৬৭৬ সালে সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন আলাে অনেক বিশাল বেগে চললেও বেগটির কিন্তু একটি সসীম মান আছে। বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহগুলাে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি দেখবেন, মাঝে মাঝে এরা চোখের আড়ালে চলে যায়, কারণ তখন এরা বিশাল গ্রহটির পেছনে থাকে। মনে করা হয়েছিল যে বৃহস্পতির উপগ্রহদের গ্রহণ (বৃহস্পতির আড়ালে চলে যাওয়া) নির্দিষ্ট সময় পর পর ঘটবে । কিন্তু রােমা খেয়াল করলেন, গ্রহণগুলাে নির্দিষ্ট সময় মেনে হচ্ছে না। তাহলে কি উপগ্রহগুলাে তাদের কক্ষপথে থাকা অবস্থায় কোনােভাবে গতি বাড়িয়ে বা কমিয়ে ফেলে? তাঁর কাছে ছিল আরেকটি বিকল্প ব্যাখ্যা। আলাে যদি অসীম বেগে চলে, তাহলে পৃথিবীতে বসে আমরা নিয়মিত বিরতিতে গ্রহণ দেখব-ঠিক যে মুহূর্তে তা ঘটবে তখনই, কসমিক ক্লকের দেওয়া টিকের মতাে । যেহেতু আলাে যে কোনাে দূরত্বই মুহূর্তের মধ্যে পার হয়ে যাবে, তাই বৃহস্পতি পৃথিবীর কাছে আসল কি দূরে গেল তাতে কোনাে পার্থক্য তৈরি হবে না।
এবার কল্পনা করুন যে আলাে একটি নির্দিষ্ট বেগে চলছে। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রতিটি গ্রহণ দেখব তা ঘটে যাবার কিছু সময় পরে। কতটুকু দেরি হবে তা নির্ভর করবে আলাের বেগ এবং পৃথিবী থেকে বৃহস্পতির দূরত্বের ওপর। বৃহস্পতি থেকে যদি পৃথিবীর দূরত্ব অপরিবর্তিত থাকে তাহলে প্রতিটি গ্রহণের ক্ষেত্রে একই পরিমাণ করে দেরি হবে। কিন্তু বাস্তবে বৃহস্পতি অনেক সময় পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে। এ সময়গুলােতে প্রতিটি গ্রহণের চিত্র আমাদের চোখে পৌছতে ক্রমান্বয়ে কম দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে। ফলে গ্রহণের দৃশ্য আমাদের চোখে ক্রমান্বয়ে আগের চেয়ে দ্রুত আসবে। উল্টোভাবে বৃহস্পতি যখন পৃথিবী থেকে দূরে সরবে তখন

প্রতিটি গ্রহণকে ক্রমান্বয়ে দেরিতে ঘটতে দেখা যাবে । কতটুকু আগে বা পরে গ্রহণের এই দৃশ্য পেঁৗছবে তা নির্ভর করবে আলাের বেগের ওপর। ফলে আমরা আলাের বেগ মাপার উপায় পেয়ে যাচ্ছি । রােমা সাহেব এ। কাজটিই করেছিলেন ।
তিনি লক্ষ করলেন, পৃথিবী বৃহস্পতির কক্ষপথের নিকটবর্তী হবার সময় বৃহস্পতির একটি উপগ্রহের গ্রহণ অপেক্ষাকৃত আগে ঘটছে এবং পৃথিবী বৃহিস্পতি থেকে দূরে সরার সময় গ্রহণ অপেক্ষাকৃত দেরিতে হচ্ছে । এই পার্থক্য কাজে লাগিয়ে তিনি আলাের বেগ হিসাব করে ফেললেন । অবশ্য তিনি খুব বেশি নিখুঁতভাবে পৃথিবী ও বৃহস্পতির দূরত্বের পরিবর্তন পরিমাপ করতে পারেননি । ফলে তার মাপা আলাের বেগ হয়েছিল সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মাইল, যার আধুনিক মান হলাে সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল । তবুও আলাের বেগকে সসীম প্রমাণ করা এবং একই সাথে তার মান বের করার ক্ষেত্রে রােমার অর্জনটুকু ছিল বড়ই গুরুত্বপূর্ণ। নিউটনের প্রিন্সিপিয়া ম্যাথম্যাটিকা প্রকাশিত হবার দশ বছর আগেই তিনি তার এই ফলাফল ঘােষণা করেন।


চিত্র : আলোর গতি ও গ্রহণের সময়।

বৃহস্পতির উপগ্ৰহলের গ্রহণ কখন দেখা যাবে সেটা একদিকে গ্রহণের সময়ের ওপরও নির্ভর করে, আবার বৃহস্পত থেকে পৃথিবীতে আলাে আসতে কত সময় লাগে তার ওপরও নির্ভর করে ফলে বৃহস্পতি যখন পৃথিবীর কাছে আসে, তখন গ্রহণ বেশি বেশি হতে দেখা যায় । আর গ্রহটি পৃথিবী থেকে দূরে যেতে থাকলে গ্রহণ কম চোখে পড়ে।


আলাের চলাচল সম্পর্কে প্রকৃত তত্ত্ব পেতে তবু ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল কিছু বিচ্ছিন্ন তত্ত্বকে জোড়া দিতে সক্ষম হলেন। এই তত্ত্বগুলাে সেই সময় পর্যন্ত তড়ি ও চৌম্বক বলের ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হতাে। প্রাচীনকাল থেকেই তড়ি ও চৌম্বক বলের সাথে মানুষের পরিচয় থাকলেও মাত্র অষ্টাদশ শতকে এসে ব্রিটিশ রসায়নবিদ হেনরি ক্যাভেন্ডিশ ও ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস কুলম্ব দুটো চার্জিত বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল তড়ি বল পরিমাপ করার সূত্র তৈরি করেন। কয়েক দশক পর ঊনবিংশ শতকের শুরুতে কয়েকজন পদার্থবিজ্ঞানী চৌম্বক বলের জন্যও অনুরূপ সূত্র বানিয়ে ফেলেন। ম্যাক্সওয়েল গাণিতিকভাবে দেখালেন যে কণিকাদের সরাসরি পারস্পরিক ক্রিয়ার কারণে এই তড়ি ও চৌম্বক বলের সৃষ্টি হয় না; বরং প্রতিটি তড়ি আধান (চার্জ) ও প্রবাহ (কারেন্ট)-এর চারপাশের অঞ্চলে একটি ক্ষেত্র (Field) তৈরি করে । এই ক্ষেত্ৰই নিকটস্থ অন্য সব আধান ও প্রবাহের ওপর বল প্রয়ােগ করে। তিনি দেখলেন যে একটিমাত্র ক্ষেত্রই তড়ি ও চৌম্বক বল বহন করে। অর্থা, তড়ি ও চৌম্বক বল আসলে একই বলের অবিচ্ছদ্য রূপ। তিনি এর নাম দিলেন তড়িচ্চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force)আর বল বহনকারী ক্ষেত্রটির নাম দিলেন তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD