Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

সামনে কি আমাদের ভয়াবহ সময়?

বাংলাদেশে করোনা সংকট ভয়াবহ দিকে মোড় নিতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। আর সে ভয়াবহতা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে,

Tuesday 12 May 2020

/ by Admin
বাংলাদেশে করোনা সংকট ভয়াবহ দিকে মোড় নিতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। আর সে ভয়াবহতা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা পরিসংখ্যান অনুযায়ী চিন্তা করলে শিউরে না উঠে উপায় নেই। আল্লাহর গায়েবি মদদ ছাড়া এক ভয়ংকর সময় অপেক্ষমাণ বাংলাদেশের জন্য।

ইউরোপ ও আমেরিকার দিকে তাকালে বোঝা যায় করোনা ফ্যাটালিটিসের প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে তা পিকের দিকে যাবে। এ পর্যায়ে দেশে প্রতিদিনের হিসাবে গড়ে ৭০০-৮০০ লোক আক্রান্ত হচ্ছে আর গড়ে ১০ জনের মতো মারা যাচ্ছে (এ লেখার সময়, ৯ মে, ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হিসাবে ৬৩৬ জন আক্রান্ত ও ৮ জন মারা গেছেন)। এটা পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় কিছুই না। আমেরিকায় প্রতিদিন আক্রান্ত হয় গড়ে হাজার তিরিশেক, রাশিয়ায় ১০-১২ হাজার, ইউকেতে এখনও এই সংখ্যা ৫-৬ হাজার। তাই আত্মতৃপ্তিতে ভোগার বা এই মহামারীকে underestimate করা মোটেই ঠিক হবে না।
বাংলাদেশে ৬ মে পর্যস্ত হিসাব অনুযায়ী মোট ১,১১,৪০২ টেস্টের বিপরীতে করোনা পজিটিভ হয়েছে ১৩,১৩৪ জনের, যা ১১.৯৩ শতাংশ। তা-ও এটা সরকারি হিসাব, বেসরকারি হিসাব যে কত তা আমরা জানি না। এবার একটু দেখে নিই পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান, যাদের সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী।

৬ মে’র হিসাব অনুযায়ী- যুক্তরাষ্ট্রে ৪ মিলিয়ন টেস্টের বিপরীতে ১২,৭৮,৪৮৫ জন পজিটিভ যা মোট টেস্টের ৩১ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের মোট ১.৪ মিলিয়ন টেস্টের বিপরীতে মোট রোগী ২,০১,১০১ যা কিনা ১৪.৩৬ শতাংশ।
স্পেনের ১.৯ মিলিয়ন টেস্টে করোনা ধরা পড়েছে ২,৫৩,৬৮২ জনের, যা শতকরা ১৩.৩৫ ভাগ। ইতালির করা ২.৩ মিলিয়ন টেস্টে করোনা পজিটিভ হয়েছে ২,১৪,৪৫৮ জনের, যা ৯.৩২ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি টেস্ট করা দেশ রাশিয়ায় ৪.৬৩ মিলিয়ন টেস্টে করোনা ধরা পড়েছে ১,৬৫,৯২৯ জনের, যা কৃত টেস্টের ৩.৫৮ শতাংশ।

শতকরা হিসাবের এই trajectoryতে বাংলাদেশকে এর বর্তমান সূচকে ধরলেও (প্রায় ১২ শতাংশ) টেস্ট সংখ্যা যখন ২/৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে তখন রোগীর সংখ্যা কত হবে, তা সহজেই অনুমেয়। ২ মিলিয়ন টেস্টের বিপরীতে রোগী হবে ২,৪০,০০০; আর ৩ মিলিয়ন ধরলে তা দাঁড়ায় ৩,৬০,০০০ এ। কাজেই এখন (৯ মে’র হিসাব) যদি ২৪ ঘণ্টায় ৫৪৬৫ টেস্টে ৬৩৬ জন রোগী শনাক্ত হয়, যখন দিনে ইউরোপ-আমেরিকার মতো ৬০-৭০ হাজার টেস্ট করা হবে, তখন রোগীর সংখ্যা কী হবে? এ জন্যই তো WHO এটাকে মার্চের ১১ তারিখ মহামারী আকারে ঘোষণা দিয়েই বলেছে, বিশ্বের সব দেশের সবচেয়ে বেশি যেটা করা দরকার তা হল টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট। আমরা এই টেস্টের দৌড়ে যোজন যোজন পিছিয়ে আছি।
আদৌ এ পরিমাণ টেস্ট করার অ্যাবিলিটি আছে কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন। তার মানে unidentified রোগীগুলো ভাইরাস নিয়ে ঘুরে বেড়াবে বা বেড়াচ্ছে যা আরও বেশি ভয়ংকর।

এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো অবস্থা কি আমাদের আছে? আছে কি আমাদের সেই পরিমাণ হাসপাতাল বেড? পর্যাপ্ত ICU বেড কি আছে আমাদের হাসপাতালগুলোয়? কিংবা ventilators? কিংবা ইউকের মতো কি বাংলাদেশ পারবে ৯ দিনে ৪০০০ বেডের একটি করোনা হাসপাতাল দাঁড় করাতে? না নেই, এগুলোর কোনোটাই নেই আমাদের। উন্নত দেশগুলোই যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, বাংলাদেশের ভয়ংকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা তো একেবারেই collapse করবে। এখনই শুনি কোভিড ছাড়া অন্যান্য জরুরি কেসের রোগীগুলো এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে পথেই মারা যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। কোভিড সমস্যা যখন পিকে পৌঁছবে, তখন কী হবে?

যতবেশি লোক করোনা আক্রান্ত হবে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ততই বাড়বে। হসপিটালাইজেসনের পরিমাণ যত বাড়বে, critical care-এ তত বেশি রোগী যাবে, তত বেশি ventilator support প্রয়োজন হবে। আর সেই সঙ্গে বাড়বে মৃত্যু, এ তো খুবই স্বাভাবিক হিসাব। তবে হ্যাঁ, দেশভেদে পরিসংখ্যান এদিক-ওদিক কিছুটা হবে এটাও ঠিক। আমাদের দেশ গরমের দেশ, এদেশে যুবা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি বা বয়স্কদের সংখ্যা কম ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায়, আমাদের বিসিজি টিকা দেয়া আছে ইত্যাদি ইত্যাদি আমাদের ফেভারে কাজ করবে।

কিন্তু আমাদের disfavour-এ কাজ করবে এমন অনেক কিছুই রয়ে গেছে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানার দিক থেকে আমরা যে পৃথিবীর worst জাতিগুলোর অন্যতম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লকডাউন চলাকালীন যেসব ঘটনা ঘটেছে এদেশে, তা আমরা সবাই জানি। উন্নত বিশ্বে এগুলো কল্পনারও অতীত। এগুলো দেখে মনে হয় আমার দেশের মানুষ লকডাউন কী আর সামাজিক দূরত্ব কী, সেটাই বোঝে না।
আরও আছে, তা হল আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ এটি। Worldometer-এর হিসাবে আমেরিকার পরেই করোনায় মৃতের দিক থেকে ইউরোপের যে চারটি দেশ শীর্ষে রয়েছে, সেই ইউকে, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সের (সম্মিলিতভাবে মৃতের সংখ্যা ১,১৩,০০০-এর অধিক) মোট জনসংখ্যা ২৪ কোটি, সেখানে ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ, যার জনসংখ্যা ২০ কোটি। বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে প্রায় ৬৭ গুণ বড় আমেরিকার জনসংখ্যা ৩৪ কোটি। কাজেই সংক্রমণকে অল্পতে রোধ করা না গেলে, দ্রুত মহামারীর পিক স্টেজ অতিক্রম না করতে পারলে এবং জ রেটকে (সংক্রমণের ratio) ১-এর নিচে না নামিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশের মৃত্যুর সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা শুধু আল্লাহই জানেন।
কাজেই শঙ্কিত হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

>>আপডেট নিউজ পেতে নিচের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD