Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব-০৪

Friday, 22 November 2019

/ by Admin

মহাবিশ্ব সম্পর্কে ফ্রিডম্যান খুব সরল দুটো অনুমান প্রস্তাব করলেন । এক, আমরা যে দিকেই তাকাব, মহাবিশ্বকে একই রকম দেখব এবং দুই, যদি আমরা মহাবিশ্বকে অন্য কোথাও থেকেও দেখি তবুও এই কথা সত্য হবে। এই দুটি ভাবনা মাথায় রেখে ফ্রিডম্যান সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের সমাধান বের করলেন এবং দেখালেন, মহাবিশ্বকে স্থির মনে করা অনুচিত। প্রকৃতপক্ষে, হাবলের আবিষ্কারের কয়েক বছর আগেই ১৯২২ সালে। ফ্রিডম্যান তাই অনুমান করলেন, যা পরে হাবল পর্যবেক্ষণ করলেন।
মহাবিশ্ব সব দিকে একই রকম দেখায়-এই অনুমান বাস্তবে পুরােপুরি সঠিক নয়। যেমন আমরা বলেছি, রাতের আকাশে কিছু তারা একটি স্বতন্ত্র পট্টি গঠন করে, যাকে আমরা মিল্কিওয়ে বলি । কিন্তু যদি আমরা দূরের গ্যালাক্সির দিকে তাকাই তবে আমরা দেখব যে সব দিকেই তারার সংখ্যা প্রায় সমান । মহাবিশ্বে আসলেই সব দিকে প্রায় একই রকম দেখায়। শর্ত হলাে চিন্তা করতে হবে গ্যালাক্সিদের মতাে বড় দূরত্বের মাপকাঠিতে এবং ছােট দূরত্বের পার্থক্যে ছাড় দিতে হবে। মনে করুন, আপনি একটি জঙ্গলের মধ্যে আছেন, যেখানে বিভিন্ন গাছপালা এলােমেলােভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক দিকে তাকিয়ে আপনি হয়তাে দেখবেন, সবচেয়ে কাছের গাছটি আছে এক মিটার দূরে। আরেক দিকে তাকালে সবচেয়ে কাছের গাছটিকে হয়তাে তিন মিটার দূরে পাওয়া যাবে। অন্য আরেক দিকে হয়তাে দুই মিটারের মধ্যে অনেকগুলাে গাছ পাওয়া যাবে। জঙ্গলটিকে সব দিকে একই রকম মনে হচ্ছে না । কিন্তু আপনি যদি এক মাইলের মধ্যের সব গাছ নিয়ে চিন্তা করেন তাহলে এই পার্থক্যগুলাে আর থাকবে না। দেখা যাবে যে আপনি যেদিকেই তাকান, জঙ্গলের চেহারা একই রকম।


চিত্র : আইসােট্রপিক বন বিনের গাছগুলাে সুষম হারে বিন্যস্ত থাকলেও নিকটস্থ গাছগুলােকে দেখে তা বােঝা যায় না।


একইভাবে আমাদের আশপাশে তাকালে মহাবিশ্বকে সুষম (সব দিকে একই রকম) মনে হয় না। কিন্তু বড় দৈর্ঘ্যের স্কেলে চিন্তা করলে আমরা যেদিকেই তাকাই একই রকম দেখি।

সত্যিকারের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ফ্রিডম্যানের অনুমানটি একটি মােটামুটি ধারণা প্রদান করে। এর প্রমাণ হিসেবে তারকাদের সুষম বিন্যাসের ব্যাপারটি অনেক দিন ধরে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আরাে পরে ঘটা একটি ইতিবাচক দুর্ঘটনা ফ্রিডম্যানের অনুমানের নতুন একটি দিক উন্মােচিত করে। এতে দেখা যাচ্ছে, ফ্রিডম্যানের অনুমান মহাবিশ্ব সম্পর্কে খুব নিখুঁত চিত্র তুলে ধরছে।


১৯৬৫ সালে দুজন আমেরিকান পদার্থবিদ আনো পেনজিয়াস ও রবার্ট উইলসন নিউ জার্সির বেল টেলিফোন ল্যাবে কাজ করছিলেন। টেস্ট করছিলেন খুবই সংবেদী একটি মাইক্রোওয়েভ ডিটেকটর। মাইক্রোওয়েভ হলাে আলাের মতােই এক ধরনের তরঙ্গ, তবে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় এক সেন্টিমিটার । ডিটেকটরে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি নয়েজ পাওয়া যাচ্ছে দেখে পেনজিয়াস ও উইলসন চিন্তিত হলেন। ডিটেকটরে পাখির মল খুঁজে পাওয়া গেল। ঝামেলা হওয়ার মতাে অন্য কারণগুলােও খতিয়ে দেখা হলাে। কিন্তু এগুলাের কোনােটা করেই উল্লেখযােগ্য কোনাে ফল আসল না। অদ্ভুত এই নয়েজটি দিনে-রাতে সমানে পাওয়া যাচ্ছে।

আবার এটি বছরের যেকোনাে সময়ই পাওয়া যাচ্ছে, অথচ পৃথিবীর আবর্তন ও সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণনের কারণে একেক সময় ডিটেকটরের মুখ একেক দিকে তাক করা ছিল। কাজেই তারা বুঝলেন, এই নয়েজ সৌরজগৎ শুধু নয়, গ্যালাক্সিরও বাইরে থেকে আসছে । এটি মহাকাশের সব দিক থেকে সমানভাবে আসছে বলে মনে হলাে। এখন আমরা জানি, আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন, এই নয়েজের খুব বেশি। তারতম্য কখনােই হয় না। ফলে নিজেদের অজান্তেই পেনজিয়াস ও উইলসন ফ্রিডম্যানের প্রথম অনুমানের একটি দারুণ উদাহরণ হাতে পেয়ে গেলেন। অর্থাৎ, মহাবিশ্ব সব দিকে একই রকম।

এই মহাজাগতিক নয়েজের উৎস কী তাহলে? পেনজিয়াস ও উইলসন যখন তাদের ডিটেকটরের নয়েজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন তার প্রায় একই সময়ে কাছাকাছি এলাকায় আরও দুজন আমেরিকান পদার্থবিদ মাইক্রোওয়েভ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাঁরা হলেন প্রিনস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বব ডিক ও জিম পিবলস। তাঁরা জর্জ গ্যামাের (যিনি একসময় অ্যালেক্সান্ডার ফ্রিডম্যানের ছাত্র ছিলেন) একটি প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছিলেন। প্রস্তাবনাটি ছিল যে আদি মহাবিশ্ব নিশ্চয় খুব বেশি উত্তপ্ত ও ঘন ছিল, যা উত্তপ্ত অবস্থায় সাদা আলােতে জ্বলজ্বল করছিল। ডিক ও পিবলস বললেন, আদি মহাবিশ্বের এই বিকিরণ আমাদের আজও দেখার কথা।

কারণ এর খুব দূরের অংশ থেকে আসা আলাে আমাদের কাছে এইমাত্র এসে পৌছাবে। কিন্তু মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে এতে মারাত্মকভাবে লাল সরণ ঘটবে। এর ফলে এটি আমাদের কাছে দৃশ্যমান আলাের বদলে মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ হিসেবে আসবে। ডিক ও পিবলস এই বিকিরণ খোঁজ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এটা জানতে পেরে পেনজিয়াস ও উইলসন বুঝলেন, তাঁরা এটাই পেয়ে গেছেন।

এই অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে পেনজিয়াস ও উইলসন নােবেল পুরস্কার পান বিষয়টি ডিক ও পিবলসের জন্য অবশ্যই একটু কষ্টকর, গ্যামাের কথা আর নাইবা বললাম।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD