Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব-০২

Thursday, 21 November 2019

/ by Admin

এখন আমরা জানি খালি চোখে আমরা যে নক্ষত্রগুলাে দেখি তা সব নক্ষত্রের একটি সামান্য অংশ । আমরা প্রায় পাঁচ হাজার নক্ষত্র খালি চোখে দেখি। এটা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিরই প্রায় ০.০০০১ শতাংশ মাত্র। আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা দশ হাজার কোটির বেশি গ্যালাক্সি দেখতে পাই। প্রতিটি গ্যালাক্সিতে আবার গড়ে প্রায় দশ হাজার কোটি তারকা আছে। একটি তারকাকে যদি একটি লবণের কণা মনে করা যায়। তাহলে খালি চোখে দৃশ্যমান সব তারকাকে একটি চায়ের কাপে রেখে দেওয়া যাবে, যেখানে মহাবিশ্বের সব তারকাকে রাখতে হলে ১০ মাইলের। চেয়ে বড় ব্যাসের একটি গােলক লাগবে । | তারকারা বহু দূরে থাকার কারণে এদেরকে আলােক বিন্দুর মতাে দেখায়। আমরা খালি চোখে এদের আকার-আকৃতি বুঝতে পারি না । কিন্তু হাবল দেখলেন, তারকাদের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলাে ভিন্ন ভিন্ন টাইপ । আলাে দেখেই আমরা এদের পার্থক্য ধরতে পারি। নিউটন আবিষ্কার করেছিলেন যে সূর্যের আলাে ত্রিভুজাকৃতির একখণ্ড প্রিজমের মধ্যে দিয়ে পার হলে রঙের বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। রংধনুতে যেমন দেখা যায় সেভাবে । একটি নির্দিষ্ট আলােক উৎস থেকে আসা বিভিন্ন রঙের আপেক্ষিক তীব্রতাকে বলে বর্ণালি (Spectrum)। একটি নির্দিষ্ট তারকা বা গ্যালাক্সির দিকে টেলিস্কোপ তাক করে রেখে সেই তারকা বা গ্যালাক্সির আলোের বর্ণালি দেখা সম্ভব।

এই আলাে দেখে আমরা এর তাপমাত্রাও জানতে পারি। ১৮৬০ সালে জার্মান পদার্থবিদ গুস্তাভ কাশফ উপলব্ধি করেন, যেমনিভাবে উত্তপ্ত হলে কয়লা জ্বলে ওঠে তেমনি যেকোনাে বস্তু, এমনকি তারকারাও উত্তপ্ত অবস্থায় আলাে বা অন্যান্য বিকিরণ নির্গত করবে। বস্তুর এই জ্বলে ওঠার কারণ হচ্ছে এর অভ্যন্তরে থাকা পরমাণুর তাপীয় গতি । এই ঘটনার নাম ব্ল্যাকবডি রেডিয়েশন বা কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ (যদিও আলাে বিকিরণকারী বস্তুরা দেখতে কালাে নয়)। কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের বর্ণালি থেকে পাওয়া তথ্যে ভুল হওয়া প্রায় অসম্ভব । তাপমাত্রা বদলাবার সাথে সাথে এর ধরন বদলাতে থাকে। ফলে উজ্জ্বল বস্তু থেকে আসা আলাে থার্মোমিটারের মতাে কাজ করে। আমরা বিভিন্ন তারকার যে বর্ণালি দেখি তার ক্ষেত্রেও এই কথা খাটে । এই বর্ণালি তারকাটির তাপীয় অবস্থার সব নাড়ি-নক্ষত্র উন্মুক্ত করে দেয়।

চিত্র : তারকার বর্ণালি একটি নক্ষত্রের আলাের বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে এর তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলের উপাদান বের করা যায় |

ভালাে করে দেখলে বােঝা যাবে, নক্ষত্রের আলাে আমাদেরকে আসলে আরও তথ্য দেয়। আমরা দেখি যে নির্দিষ্ট কিছু রং এখানে অনুপস্থিত। এই অনুপস্থিত রংগুলাে কী হবে সেটা আবার বিভিন্ন নক্ষত্রের ক্ষেত্রে ভিন্ন । যেহেতু আমরা জানি যে প্রতিটি রাসায়নিক মৌল স্বতন্ত্র ধরনের একগুচ্ছ রং শােষণ করে, তাই তারকার বর্ণালিতে অনুপস্থিত রঙের সাথে তুলনা করে আমরা বলে দিতে পারি ঐ তারকার বায়ুমণ্ডলে কী কী উপাদান আছে ।কৃষ্ণবস্তু বিকিরণ। শুধু তারকারাই নয়, সকল বস্তুই এর আণুবীক্ষণিক উপাদানগুলাের তাপীয় গতির কারণে বিকিরণ নিঃসরণ করে। বিকিরণের কম্পাঙ্কের বিন্যাস থেকে বস্তুর তাপমাত্র বলা সম্ভব ।


১৯২০-এর দশকে জ্যোতির্বিদরা অন্যান্য গ্যালাক্সির নক্ষত্রদের বর্ণালি দেখা শুরু করে অবাক হয়ে গেলেন। আমাদের গ্যালাক্সির মতােই এখানেও অনুপস্থিত রঙের প্যাটার্ন একই রকম, তবে এরা একই আপেক্ষিক হারে বর্ণালির লাল প্রান্তের দিকে সরে যাচ্ছে।
পদার্থবিদরা রং বা কম্পাঙ্কের এই সরে যাওয়াকে উপলার ইফেক্ট বলেন । শব্দের ক্ষেত্রে এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত । আপনি যদি রাস্তায় চলা একটি গাড়ির দিকে লক্ষ করেন, তাহলে দেখবেন যে এটি যখন কাছে আসে তখন এর ইঞ্জিন বা হর্নের শব্দ তীক্ষ হয়ে যাচ্ছে, আবার এটি যখন আপনাকে ক্রস করে দূরে সরে যায় তখন এর শব্দের তীক্ষ্ণতা কমে যায় । ইঞ্জিন বা হর্নের শব্দ একটি তরঙ্গ, যেখানে ক্রমাম্বয়ে তরঙ্গের চূড়া ও খাঁজ সৃষ্টি হয়। একটি গাড়ি যখন আমাদের কাছে আসে, এর প্রত্যেকটি পরবর্তী চূড়া নির্গত করার সময় এটি আগের চেয়ে আমাদের বেশি কাছে থাকে। পর পর দুটি তরঙ্গচুড়ার মধ্যবর্তী দূরত্বকে বলা হয় তরঙ্গদৈর্ঘ্য। তাহলে গাড়ি স্থির থাকলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য যেমন হতাে, গাড়ি কাছে আসার সময় তা তার চেয়ে ছােট হবে। আর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছােট হবে, চূড়া ও খাজ তত বেশি সৃষ্টি হবে, যার ফলে আমাদের কানে শব্দের তীক্ষ্ণতা বা কম্পাঙ্ক জোরালাে হবে। উল্টো দিকে গাড়ি আমাদের থেকে দূরে সরে গেলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হয়ে যাবে বিধায় আমাদের কানে এর কম্পাঙ্ক ছােট হবে । গাড়ি যত দ্রুত চলবে, এই প্রভাবও তত বাড়বে।


কাজেই, ডপলার ইফেক্টের সাহায্যে আমরা গতি মাপতে পারি । আলাে বা বেতার তরঙ্গও একই আচরণ করে। সত্যি বলতে, পুলিশও ডপলার ইফেক্টের সাহায্যে গাড়ির গতিবেগ মাপে। এ ক্ষেত্রে তারা কাজে লাগায় প্রতিফলিত বেতার তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
চতুর্থ অধ্যায়েই আমরা বলেছি, দৃশ্যমান আলাের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুবই ক্ষুদ্র। এর পাল্লা হলাে এক সেন্টিমিটারের চল্লিশ ভাগ থেকে শুরু করে থেকে আট কোটি ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত। আলাের বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যই আমাদের চোখে আলাদা আলাদা রং হিসেবে ধরা পড়ে। সবচেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলাে থাকে লাল প্রান্তের দিকে এবং ছােটগুলাে নীল প্রান্তের দিকে।


এবার আমাদের থেকে নির্দিষ্ট দূরের একটি আলােক উৎস, যেমন একটি নক্ষত্রের কথা চিন্তা করুন, যা থেকে শুধু একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যেরই আলাে আসছে। এটি নিজে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য নির্গত করবে আমরাও ঠিক সেটাই দেখতে পাব । এবার মনে করুন আলাের উৎসটি দূরে সরতে লাগল। শব্দের মতােই এ ক্ষেত্রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হয়ে যাবে এবং এর বর্ণালি লাল দিকে সরে যাবে।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD