Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

মহাবিশ্বের বিশালতার গভীরে

Sunday, 30 June 2019

/ by Admin

জ একটু মহাবিশ্বের বিশালতায় ডুব দেয়া যাক । তাহলে তুলনার সুবিধার জন্যে প্রথমেই জানা থাকা দরকার পৃথিবী কেমন বড় । তোমরা অনেকেই জানো,পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল ৬৩৭১ কিলোমিটার বা ৩৫৫৯ মাইল । তবে এটা হল গড় ব্যাসার্ধ । পৃথিবী যেহেতু দুই মেরু অঞ্চলে কিছুটা চাপা, তাই মেরুতে ব্যাসার্ধ অপেক্ষাকৃত কম; প্রায় ৬৩৫৯ কিলোমিটার। তবে, ব্যাসার্ধ ধরে হিসেব করলে যত বড় গোলক তৈরি হয়, শুধু সেটাই পৃথিবীর চৌহদ্দি নয়। কারণ,পৃথিবীর চারদিক বেষ্টন করে আছে এর বায়ুমণ্ডল । সুনির্দিষ্ট কোন সীমানা না থাকলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কি.মি. উপরের কারমান রেখাকে অনেক সময় বায়ুমণ্ডল ও বহিঃস্থ মহাকাশের সীমানা ধরা হয়। এছাড়া,কোন মহাকাশযান বায়ুমণ্ডলের ১২০ কি.মি. এর ভেতরে এলে বলা হয় এটি ফিরে এসেছে। তাহলে নিখুঁত করে বলতে গেলে,ভূপৃষ্ঠেই পৃথিবীর সীমানার সমাপ্তি ঘটেনি। আমাদের মাথার উপরেও রয়েছে পৃথিবীর আরেকটি অংশ। ব্যারোমিটারের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী টরিসেলের ভাষায়, “বিশাল এক বায়ুসমূদ্রের তলদেশে আমরা ডুবে আছি

যাই হোক,মূল আলোচনায় আসি । এবার আমরা দেখার চেষ্টা করব,মহাবিশ্বে কত বিশাল বিশাল বস্তু থাকতে পারে। ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে শুরু করি,কেমন।
পৃথিবী হল সৌরজগতে অবস্থানের দিক দিয়ে গ্রহসমূহের মধ্যে সূর্য থেকে তৃতীয় স্থানে। ২০০৬
সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্লটো গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়ায় সৌরজগতে এখন গ্রহের সংখ্যা আটটি । এদের মধ্যে বৃহত্তম হল বৃহস্পতি (Jupiter)এর ভর পৃথিবীর ৩১৭ গুণেরও ওপরে। অন্য দিকে আয়তন ১৩২১ গুণ। স্বভাবতই এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণও তুলনামূলক বেশি,পৃথিবীর আড়াই গুণ । ফলে, উপর থেকে নিক্ষিপ্ত কোন বস্তুর পৃথিবী পৃষ্ঠে নেমে আসার বেগ প্রতি সেকেন্ডে যত বাড়বে,বৃহস্পতি গ্রহে তার আড়াই গুণ বাড়বে।

আচ্ছা, সৌরজগতেই যখন আছি, আরেকটু ভ্রমণ করি । গ্রহদের কথা যখন বললামই,উপগ্রহদের প্রসঙ্গও আনা যাক। উপগ্রহের কাজ হল,গ্রহদেরকে প্রদক্ষিণ করা । সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহটিকেই কেন্দ্র করে ঘুরছে বৃহত্তম উপগ্রহটিও।

পৃথিবী হল সৌরজগতে বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান এই উপগ্রহটির নাম গ্যানিমিড (Ganymede) মজার কথা হল,এই উপগ্রহটি আকারে বুধ গ্রহের (Mercury) চেয়েও বড়, অবশ্য ভর সে তুলনায় কম। দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটানের (taitan) চেয়ে এর ভর ২ শতাংশ বেশি। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের ভর এর চেয়ে দুই গুণ কম।

এবার সূর্যের দিকে যাওয়া যাক । অবস্থান এবং কার্যক্রম - দুই দিক দিয়েই সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু হল এই সূর্য। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্যান্য অনেক নক্ষত্রের তুলনায় সূর্য একেবারে সাধারণ শ্রেণির একটি নক্ষত্র হলেও আমাদের পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহের তুলনায় এর ভর বা আকার বিশাল। সৌরজগতের প্রায় ৯৯.৯০ ভাগ ভর সূর্য একাই বহন করে!

পৃথিবীর সাথে তুলনা করলে,যদি তুমি ১০৯টি পৃথিবীকে একটার পর একটা বসিয়ে দাও তাহলে সূর্যের এপাশ থেকে ওপাশে পৌঁছতে পারবে। অর্থাৎ,এর ব্যাস পৃথিবীর তত গুণ। সূর্য কত বড় দানব,তাই না? আর এই দানবের দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। এই দূরত্বকে আবার এস্ট্রোনোমিক্যাল একক (Unit) বা এইউ বলে। কিন্তু সূর্যের সীমানা শুধু তার নিজের আকার দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না। দেখতে হবে,কত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সে তার বিস্তার লাভ করে।
সূর্যের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহের খেতাবপ্রাপ্ত এখন নেপচুনের কপালে। চারপাশে প্রদক্ষিণরত আটটি গ্রহের চৌহদ্দি পেরিয়ে আরও বহুদূর বিস্তৃত সৌরজগতের সীমানা।

দূরতম গ্রহ নেপচুন থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। দূরতম বামন গ্রহ (Dwarf Planet) ইরিসের দূরত্ব সূর্য থেকে ১৪৪২ কোটি কিলোমিটার যা পৃথিবীর দূরত্বের প্রায় ৯৬ গুণ। অন্য দিকে সৌর ঝড় পৌঁছে যায় আরও বহু দূর পর্যন্ত। সেই দূরত্ব হল ৫০ থেকে  ২০০ এইউ (১ এইউ = পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব)। সূর্য থেকে ১ লক্ষ এইউ দূরে অবস্থান উর্ট ক্লাউডের। আর সূর্য থেকে ২ আলোকবর্ষ পর্যন্ত এর অভিকর্ষ যথেষ্ট শক্তিশালী (এক আলোকবর্ষ হল,আলো ১ বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করবে;প্রতি সেকেন্ডে যার বেগ ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল)। অর্থাৎ,সূর্য থেকে ২ আলোকবর্ষ দূরে থাকা কোন বস্তুও ওকে প্রদক্ষিণ করবে!

সূর্যকে নিয়ে অনেক কিছু জানলাম। এবার,একটু সুর্যের বাইরে থেকে আসা যাক। আমাদের সূর্য হল মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সির একটি সাধারণ নক্ষত্র বা তারকা। এখানে,বলে রাখা প্রয়োজন রাতের আকাশে আমরা যেসব জ্যোতিষ্ক দেখি,তাদের সবাই তারকা (Star)নয় (মহাকাশ বিজ্ঞানের ভাষায়)। তারকা বা নক্ষত্র হল তারাই যারা নিউক্লিও বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি,বিশেষ করে বিপুল পরিমাণ তাপ ও আলো উৎপন্ন করতে সক্ষম। এদের অনেকেরই চারদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ নিয়ে গ্রহমণ্ডল রয়েছে। কেউ আবার অন্য আরেকটি তারকার সাথে মিলে দ্বিমিক (Binary Star!)এমনকি ত্রিমিক তারকা জগৎ গড়ে তুলেছে। এরকম বিলিয়ন (১০০ কোটি) তারকা
নিয়ে হয় গ্যালাক্সিআমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে রয়েছে ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন তারকা।

সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী তারকা হল প্রক্সিমা সেন্টোরাই। এর দূরত্ব সূর্য থেকে সোয়া চার আলোকবর্ষ। এ অবশ্য সূর্যের চেয়ে ছোট। অন্য দিকে,রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা লুব্ধক কিন্তু সূর্যের চেয়ে বড় । লুব্ধক বি নামক আরেকটি তারকার সাথে বাইনারি স্টার জগৎ গড়ে তোলায় মিলিত দীপ্তি বেশ প্রখর বলেই মূলত এটি ঔজ্জ্বল্যে অন্য তারকাদের হারাতে পেরেছে। লুব্ধক এর ভর প্রায় সূর্যের দ্বিগুণ আর ব্যাস প্রায় ৬ গুণ।

এ আর এমনকি! যেখানে এমন অন্তত ২৫টির বেশি তারকা আছে যাদের ব্যাস সূর্যের ১০০০ গুণ অপেক্ষা বেশি। ব্যাসার্ধ সূর্যের ৫০০ থেকে ১০০ গুণ এমন তারকা আছে আরও প্রায় ২০টি! কিছু দিন আগ পর্যন্ত আমরা জানতাম ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিস হচ্ছে বৃহত্তম তারকা। এর ব্যাসার্ধ ছিল সূর্যের ১৪২০ গুণ । কিন্তু সূর্যের একক বড় ভাই হবার রেকর্ডটি বেচারা ধরে রাখতে পারেনি। সর্বশেষ হিসেব মতে, তারকাদের বড়ত্বের কাতারে এর স্থান নবমে। প্রায় ১৭০৮ সৌর ব্যাসার্ধ নিয়ে এখন পর্যন্ত শীর্ষে আছে ইউওয়াই স্কুটি (UI Scuti) নামক একটি লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকা। ১৬৫০ সৌর ব্যাসার্ধ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে এনএমএল সিগনি।

তবে আকার বড় হলেই যে ভরও বেশি হবে এমন কোন কথা নেই। যদি তাই হত,তাহলে তো তারকাদের মধ্যে স্কুটির ভরই হত সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত জানা মতে,সবচেয়ে ভারী তারকা কিন্তু আর১৩৬১ (R136a1) এর ভর ২৩৬ সৌর ভরের সমান। অপর দিকে, স্কুটি তারকা কিন্তু এখানে ফ্লপ খেয়ে গেল। ওর ভর মাত্র প্রায় ৩২ সৌর ভরের সমান। অথচ এমন অন্তত ১৮টি তারকা আছে যাদের ভর সূর্যের শত গুণ।

আজ এ পর্যন্তই। খোদা হাফিজ।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD