নাসা’র নতুন গ্রহ শিকারী যন্ত্র যত গ্রহ খুঁজে পেতে সফল হয়েছে, এর মধ্যে সে প্রথম এমন একটি গ্রহ খুঁজে পেয়েছে যার আকার পৃথিবীর সমান।
Transiting Exoplanet
Survey Satellite (TESS) নামের একটি স্যাটালাইট এই গ্রহটি খুঁজে পেয়েছে, একই সাথে তারা নেপচুনের মত একটি ছোট গ্রহ খুঁযে পেতে সক্ষম হয়েছে এবং এই দুইটি গ্রহই HD 21749 নামক একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দুই গ্রহ পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৩ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
Washington D.C. এর Carnegie Institution for Science এর Terrestrial Magnetism (DTM) ডিপার্টমেন্টের সহ গবেষক Johanna Teske বলেন,”এই বিষয়টি এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ যে TESS, যেটি মাত্র এক বছর আগে চালু করা হয়েছিল, ইতিমধ্যেই গ্রহ সন্ধানের এই খেলায় একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।”
গ্রহ আছে এমন নক্ষত্র নির্ণয়
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে SpaceX এর Falcon 9 রকেটে করে এটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হয় যাতে এটি পৃথিবীর কাছের এবং সবচেয়ে উজ্জ্বল কিছু নক্ষত্রের চারিদিকে গ্রহের সন্ধান করতে পারে। আমরা যখন কোন তারার দিকে তাকাই তখন কোন কোন নক্ষত্রের দিকে তাকালে মনে হয় তা টিপটিপ করে জ্বলছে।
এর কারণ দুইটি। হয়ত এর বিশাল দূরত্বের জন্য আলো কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তা আমাদের চোখে আসতে সময় নেয়। আর তা না হলে কোন গ্রহ সেই সময় সেই নক্ষত্রের সামনে চলে আসে। তার কিছু সময়ের জন্য তার আলো আমাদের চোখে আসতে বাধা পায়।
এই স্যাটেলাইট সবসময় সকল নক্ষত্রকে দেখতে থাকে এবং দেখে কোথাও কোন গ্রহের জন্য কোন নক্ষত্রের আলো সেই স্যাটেলাইটের
টেলিস্কোপে আসতে বাধা পায় কিনা। যদি তাই হয়, এই স্যাটেলাইট ততক্ষণাত সেই নক্ষত্রের চারিদিকে খুঁজে দেখে কোন গ্রহ পাওয়া যায় কিনা। এভাবেই TESS, HD 21749 নক্ষত্রের চারিদিকে দুইটি গ্রহকে আবর্তমান হিসেবে খুঁজে পেয়েছে।
নাসা’র Kepler Space Telescope, যেটি কয়েকদিন আগে বন্ধ করে দেয়া হল, এটি এই একই পদ্ধতি ব্যাবহার করে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৪০০০ আবিষ্কৃত গ্রহের ৭০% গ্রহ একাই আবিষ্কার করেছে (এখানে আমি আবিষ্কার করা বলতে খুঁজে পাওয়া বোঝাচ্ছি, তৈরী করা না)।
জোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করেন যাতে TESS এমন কিছু গ্রহ খুঁজে পায় যেগুলো সম্ভাব্য বাসযোগ্য অর্থাৎ সেগুলোতে বাস করতে পারার কিছু হলেও আশা আছে এবং সেগুলো এতটুকু কাছে যে পৃথিবী থেকে নতুন নতুন যন্ত্র দিয়ে সেগুলোকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে (যেমন – নাসা’র আসন্ন James Webb Telescope এর মত কিছু নতুন টেলিস্কোপ)।
James Webb, যেটিকে ২০২১ সালে উৎক্ষেপণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটি বাসযোগ্য কিছু গ্রহের বায়ুমন্ডল পর্যবেক্ষণ করবে এবং সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে দেখবে সেখানে এমন কিছু গ্যাস পাওয়া যায় কিনা যেটি প্রাণের লক্ষণ দেখাতে পারে।
কিন্তু পৃথিবীর সমান নতুন পাওয়া HD 21749c গ্রহটিতে কোন প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়নি। এটি এর স্টার সিস্টেমের নক্ষত্রকে খুব কম সময়ে প্রদক্ষিণ করে, পৃথিবীর দিন অনুযায়ী প্রায় ৭.৮ দিন অর্থাৎ 187.2 ঘন্টায় এটি এর নক্ষত্রকে একবার প্রদক্ষিণ করে। তাহলে, কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়, এটি এর নক্ষত্রের কত কাছে অবস্থিত। এর জন্যই এই গ্রহটি খুবই গরম। (এই HD 21749 নক্ষত্রটি কোন ছোট এবং তুলনামূলক ঠান্ডা লাল বামন বা Red Dwarf নক্ষত্র নয়; এটি প্রায় আমাদের সূর্যের থেকে ২০ শতাংশ ছোট।)
TESS এর প্রাপ্ত তথ্য বুঝিয়ে দেয় যে আমাদের শনি গ্রহের মত বিভিন্ন গ্রহের চারিদিকে থাকা Steller Disk কোন তথ্য আদান প্রদানের সময় কি পরিমাণ বাধা সৃষ্টি করে। এই বাধার ফলে গবেষকেরা একটি গ্রহের আকার নির্ধারণ করতে পারেন। কিন্তু কোন গ্রহের আকার নির্ণয় করার জন্য অন্য অনেক যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে এর গ্রহের ভূমির এক ধরণের বর্ণালিরেখা যেটি একটি নক্ষত্রের ওপরে এর চারিদিকে আবর্তমান গ্রহের আকর্ষণ বল নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
HD 21749b (নেপচুনের মত গ্রহটি) নামের এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে ২৩ গুণ ভারী এবং আমাদের গ্রহ থেকে ২.৭ গুণ বেশি প্রশস্ত। এই সংখ্যাগুলো বলে দেয় যে এই গ্রহটিতে মাটি বা পাথরের চেয়ে গ্যাসের পরিমাণ বেশি। কিন্তু আমাদের সৌরজগতের গ্রহ ইউরেনাস এবং নেপচুনের মত এতটাও গ্যাসে পরিপূর্ণ নয়।
HD 21749b পৃথিবীর দিন অনুযায়ী মাত্র ৩৬ দিনে এর নক্ষত্রের চারিদিকে একবার ঘুরে আসে। এই সময়কাল আজ পর্যন্ত TESS খুঁজে পেয়েছে এমন সকল গ্রহ থেকে বেশি। গবেষকেরা যখন জানুয়ারী মাসে HD 21749b গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছিলেন তখন তারা বলেছিলেন যে এই গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর আশেপাশেই থাকে।
এভাবেই শুরু হয় পৃথিবীর সমান একটি গ্রহ আবিষ্কারের যাত্রা এবং এটি নিয়ে এখনো গবেষকেরা গবেষণা করেই যাচ্ছেন। যদি এই গ্রহ দুইটি সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখবেন কারণ আমরা অবশ্যই এখানে সেই নতুন আপডেট দিয়ে রাখব। ধন্যবাদ।
No comments
Post a Comment