তারিখ ১৬ অক্টোবর, ২০১৭। Panoramic Survey Telescope and Rapid
Response System (Pan-STARRS) টেলিস্কোপ
থেকে নেওয়া ডেটাগুলি
দেখছিলেন গবেষক
Rob Weryk। তিনি লক্ষ্য
করলেন কিছু একটা বস্তু
ঘুরছে ৬.৩০ কোণে; যেটা অস্বাভাবিক। পরে ২২শে অক্টোবরCanada-France-Hawaii
Telescope (CFHT) দিয়ে আরও ভালোভাবে
লক্ষ্য করলে নিশ্চিত
করা যায় যে বস্তুটি
সৌর জগতের বাইরের
থেকে আসছে।
নাসার Thomas
Zurbuchen says বলেন, “কয়েক দশক ধরে আমরা তাত্ত্বিক
ভাবে কল্পনা করেছি
যে বহির্জগতের বস্তু
আসেপাশে থাকতে
পারে - এই প্রথমবার
- আমরা সরাসরি লক্ষ্য
করলাম এই রকম কিছুর”। এই ঐতিহাসিক
বস্তুটিকে চিহ্নিত
করা হয় A/2017 UI নাম দিয়ে।
এবার জানা যাক ওই বস্তুটির
সম্পর্কে। প্রথমে A/2017 UI কে ধুমকেতু
ভাবা হয়েছিল। পরে ২২ তারিখে CFHT দিয়ে পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এর কোনো লেজ নেই। তারমানে
এটি কোনো গ্রহাণু
হবে।
বর্হিজগৎ থেকে
আগত A/2017 UI
|
এর গতিপথ আলাদা রকমের হওয়ার সাথে সাথে এর গঠনও একে এক আলাদা মাত্রা এনে দেয়। মহাকাশ বিজ্ঞানীর
লক্ষ্য করেনে যে এটি ৭ ঘন্টা ১৮ মিনিটে নিজের অক্ষের চারপাশে
একবার ঘোরে। যার জন্য এর উজ্জ্বলতাতেও
বিশাল তারতম্য দেখা দিতে থাকে। আর উজ্জ্বলতার
বড় রকমের তারতম্য
মানে বস্তুটি লম্বা হবে। নাসা অনুমান করছে এটি চওড়ায় ৪০০ মিটার ও লম্বায় প্রায় ৪ কিমি হতে পারে।
আর দেখা গেছে, বস্তুটির মধ্যে লালচে ভাব রয়েছে অর্থাৎ বস্তুটিতে
লোহা থাকতে পারে। ধূলার কোনো আস্তরণ না থাকায় নিষ্ক্রিয়
প্রকৃতির। মনে করা হচ্ছে, কোটি কোটি বছর ধরে মহাজাগতিক
রশ্মির আঘাত এর জলকে শুকিয়ে দিয়েছে।
বস্তুটির আরেকটি নাম রাখা হয়েছে। সেটি হল ‘Oumuamua’(উচ্চারণ করুন ওহ্-মু-আহ্-মু-অহ্) যার অর্থ ‘অতীত থেকে আসা দূত’।
এটি আসছে ভেগা নক্ষত্রের
(দূরত্ব ২৫ আলোক বর্ষ) আসেপাশের
কোনো অঞ্চল থেকে।
২০১৭ সালের নভেম্বর
মাসে এটি ঘন্টায়
৩৮.৩ কিমি বেগে সৌর জগতে প্রবেশ
করে ও ডিসেম্বরের
মাঝামাঝি এটি সৌর জগৎ থেকে বেরও হয়। এখন এর গন্তব্যস্থল পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভেগা নক্ষত্র ১২০০০
খ্রীস্ট পূর্বাব্দে
উত্তর মেরুর সাথে একই সরল রেখায়
ছিল। এখন যেমন ধ্রুব
তারা রয়েছে। ভেগা আবার ১৩৭২৭
সালে উত্তর
মেরু তারা হবে।
আমাদের সৌরজগতে ঘুরে গেল ‘ওমুয়ামুয়া’। হ্যাঁ, পাথরের মত দেখতে এই বিশেষ বস্তুটির নাম এমনই দেওয়া হয়েছে। প্রথমটায় গ্রহাণু মনে হলেও, পরে ওই বস্তুটির বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এক মহাকাশ বিজ্ঞানীর নামে এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওমুয়ামুয়া’।
খোদ সৌরজগতে ঢুকে পড়ে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে চলা চুরুট আকৃতির এই বস্তুটি। এলিয়েনদের পাঠানো কোনও মহাকাশযান হতে পারে বলে অনেকেই অনুমান করছেন। এই অনুমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে স্টিফেন হকিংয়ের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী হাইটেক স্ক্যানারও ব্যবহার করছেন।
প্রায় সিকি মাইল লম্বা ও ২৬০ ফুট চওড়া এই বস্তুটি ঘণ্টায় এক লক্ষ ৯৬ হাজার মাইল গতিতে ছুটে চলেছে। যদিও তা সাধারণ গ্রহাণুও হতে পারে, তবুও এর আকার-আকৃতি ও গতিবিধি দেখে বিজ্ঞানীরা একে ভিন্ন চমকপ্রদ কিছু ভাবছেন। ‘ব্রেকথ্রু লিসেন’ নামে বিজ্ঞানীদের একটি দল আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রিন উপকূল থেকে ১০ ঘণ্টা এটিকে রেডিও টেলিস্কোপে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ওই বস্তুটি থেকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেত শোনার অপেক্ষায় আছেন। এ সংকেত যদি একটি মোবাইল ফোনের চেয়ে বেশি না হয়, তবে তারা আরও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবেন, ওমুয়ামুয়াকে মহাকাশের বাইরের কোনও প্রাণীই পাঠিয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এ বস্তুটি থেকে কোনও ধুলা নির্গত হচ্ছে না, যা আর দশটা গ্রহাণুর চলার পথে বিজ্ঞানীরা দেখে থাকেন।
ওমোয়ামোয়া (Oumuamua) হল একটি
গ্রহাণু, যা
কিছুদিন আগেই
আমাদের সৌরজগতে
অতিথি হয়ে
এসেছিল। অতিথি
বলা হচ্ছে এই কারণেই
যে, এই গ্রহাণুর
সৃষ্টি আমাদের
সৌরজগতে নয়।
ওমোয়ামোয়াই হল বিজ্ঞানীদের সনাক্তকৃত প্রথম
আন্ত:নাক্ষত্রিক বস্তু। জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট উয়েরিক
অত্যন্ত দীর্ঘ
অধিবৃত্তিক আবর্তন
পথ (Highly Eccentric Hyperbolic Trajectory) সম্পন্ন
এই গ্রহাণুটি দেখতে
পান গত অক্টোবর
মাসের ১৯ তারিখ।
প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপে
অবস্থিত PAN-STARRS টেলিস্কোপের সাহায্যে এই গ্রহাণুটি যখন প্রথম দৃষ্টিগোচর হয়, তখন পৃথিবী
থেকে এটির
দূরত্ব ছিল
মাত্র ০.২ এস্ট্রোনমিকাল ইউনিট (৩০ মিলিয়ন কি.মি., ১৯ মিলিয়ন
মাইল)। বস্তুটিকে প্রথমে
একটি ধুমকেতু
হিসেবে ধারণা
করা হলেও, এক সপ্তাহ
পর্যবেক্ষণের পরই
বিজ্ঞানীরা এটি
একটি গ্রহাণু
বলে নিশ্চিত হন।
ওমোয়ামোয়া একটি হাওয়াইয়ান শব্দ, যার অর্থ
স্কাউট বা অনুসন্ধানকারী। সুদূর অতীতে
অজানা উৎস
থেকে আমাদের
সৌরজগতের পানে
রওনা দেবার
কারণেই এ নামকরণ।
গ্রহাণুটির ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়ন
প্রদত্ত নাম
হল ‘1I/2017 U1’। এখানে 1 দ্বারা প্রথম
এবং ‘I’ দ্বারা আন্ত:নাক্ষত্রিক বস্তু বোঝানো
হয়েছে।
ওমোয়ামোয়া দেখতে অনেকটা ‘চুরুট (Cigar)’-এর মত, এবং আমাদের সৌরজগতের কুইপার বেল্ট বস্তুগুলোর মতই অনেকটা লোহিত বর্ণের। এর লম্বায় প্রায় ৬০০ ফুট (১৮০ মিটার) এবং পাশে ১০০ x ১০০ ফুট (৩০ x ৩০ মিটার)।প্রায় ৩৪ দিন পর্যবেক্ষণের পর সূর্যের সাপেক্ষে গ্রহাণুটির অর্বিটাল এক্সেন্ট্রিসিটি হিসেব করা হয় ১.২; যা কিনা এর অত্যন্ত দীর্ঘ কক্ষপথের প্রমাণ দেয় (পক্ষান্তরে, পৃথিবীর অর্বিটাল এক্সেন্ট্রিসিটি হল ০.০১৬৭)।
গত ২৫শে অক্টোবর সৌরজগতে গ্রহাণুটির অবস্থান (চিত্র- গত ২৫শে অক্টোবর ২০১৭ সৌরজগতে গ্রহাণুটির অবস্থান)। |
ধারণা করা হচ্ছে গ্রহাণুটি লিরা (Lyra) নক্ষত্রপুঞ্জের ভেগা (Vega) নামক নক্ষত্রের দিক থেকে এসেছে। তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, গ্রহাণুটি ক্যারিনা-কলাম্বিয়া নক্ষত্রগোষ্ঠীর কোন নক্ষত্র-ব্যবস্থা থেকে কোন কারণে ছিটকে বেরিয়ে গেছে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন বছর আগে। ক্যারিনা-কলাম্বিয়া নক্ষত্রগোষ্ঠী বর্তমানে লিরা নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থানের চেয়ে অনেক দূরে রয়েছে।
গ্রহাণুটি প্রতি সেকেন্ডে ২৬.৩৩ কি.মি. গতিতে মহাশূণ্যে ভ্রমণ করে চলেছে। আর নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণন কাল হল ৮ ঘন্টা ৬ মিনিট। সূর্যের মধ্যাকর্ষণের ফলে পেরিহিলিয়নের সময় (সূর্যের সবচে নিকটাবস্থায়) গ্রহাণুটির গতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭.৭১ কি.মি./সেকেন্ড যা সেই কক্ষপথ বিবেচনায় সূর্যের মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি। একারণেই গ্রহাণুটি সূর্যের মধ্যাকর্ষণের মধ্যে বাঁধা পরেনি।
ওমোয়ামোয়ার ট্রাজেক্টরি বা আবর্তন পথ পর্যবেক্ষণ করা হয় হাওয়াই-এর PAN-STARRS1 টেলিস্কোপ এবং কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপ (CFHT)-এর সাহায্যে। আর গঠন ও আকার পর্যবেক্ষণ করা হয় চিলির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (VLT) ও জেমিনি সাউথ টেলিস্কোপ, হাওয়াই-এর Keck-2 টেলিস্কোপ এবং স্পেনের উইলিয়াম হার্শেল টেলিস্কোপের সাহায্যে।
২৮ অক্টোবর উইলিয়াম হার্শেল টেলিস্কোপে তোলা ছবিটিতে মাঝখানের বিন্দুটি হল ‘ওমোয়ামোয়া’। আর পেছনের তারাগুলোকে ছোট ছোট রেখার মত মনে হচ্ছে, কারণ টেলিস্কোপটি দ্রুতগামী গ্রহাণুটিকে অনুসরণ করছে
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যারেন জে. মিখ, রবার্ট উয়েরিক এবং তাদের সহকর্মীদের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গত ২০ নভেম্বর ‘নেচার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।
ওমোয়ামোয়া গ্রহাণুটি অক্টোবরের শেষ নাগাদই খুবই ক্ষীণ হয়ে যায় এবং তখন তার আপাত দ্যুতি (Apparent Magnitude) মাত্রা ছিল ~২৩।
২০২০ সাল নাগাদ ওমোয়ামোয়ার আপাত দ্যুতি ৩৪তম মাত্রায় নেমে যাবে |
ওমোয়ামোয়া যে গতিতে ছুটছে, তাতে বর্তমান সময়ের কোন স্পেসক্রাফ্টের পক্ষে তাকে ধরে ফেলা অসম্ভব। তবে Initiative for Interstellar Studies (i4is) আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সূর্য ও বৃহস্পতির মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওমোয়ামোয়াকে অনুসরণের জন্য স্পেসক্রাফ্টের পাঠানোর প্রস্তাব করেছে। তাছাড়া ‘ব্রেকথ্রু স্টারশট’ টেকনোলজি (লেজারের সাহায্যে অতি ক্ষুদ্র স্পেসক্রাফ্ট মহাকাশে নিক্ষেপ) কাজে লাগানো যায় কিনা সে ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা চলছে। যদি তদন্তকারী মহাকাশযানের গতি খুব বেশি হয়, তাহলে তা গ্রহাণুটির কক্ষপথে ঢুকতে বা গ্রহাণুটির উপর অবতরণ না করে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেসব দিক বিবেচনা করলে, বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই একটি অনুসন্ধানী মিশন শুরু করে দেয়া যেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রতি বছর এরকম একাধিক আন্ত:নাক্ষত্রিক বস্তু পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যায়। সুতরাং, ওমোয়ামোয়া হারিয়ে গেলেও আমাদের আশাহত হবার কোন কারণ নেই, ভবিষ্যতে আমরা অবশ্যই এরকম আরও অচেনা অতিথিকে জানার আশা রাখতেই পারি।
No comments
Post a Comment