Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

বিগ ব্যাং, ব্ল্যাকহােল এবং মহাবিশ্বের বিবর্তন-০৩

Tuesday, 3 December 2024

/ by Admin

সময় পার হবার সাথে সাথে গ্যালাক্সিতে উপস্থিত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস মহাকর্ষের টানে গুটিয়ে গিয়ে ছােট ছােট আলাদা মেঘ গঠন করে। এই মেঘ সঙ্কুচিত হলে এর মধ্যে থাকা পরমাণু একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করে করে গ্যাসের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একসময় এর তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে এতে নিউক্লিয়ার ফিউশন (সংযােজন) বিক্রিয়া শুরু হয়। এই ফিউশনের ফলে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিণত হয়। নিয়ন্ত্রিত উপায়ে বিস্ফোরিত একটি হাইড্রোজেন বােমার মতাে এই বিক্রিয়ায় নিঃসৃত তাপের কারণেই একটি নক্ষত্র উজ্জ্বল হয়। এই বাড়তি তাপ গ্যাসের চাপও (বাইরের দিকে বাড়িয়ে তােলে। একসময় এই চাপ মহাকর্ষীয় টানের (যা কাজ করে ভেতরের দিকে, ঘটাতে চায় সঙ্কোচন) সাথে সেয়ানে সেয়ানে লড়তে পারে। এর ফলে গ্যাসের সঙ্কোচন বন্ধ হয়। এভাবেই এই মেঘ। আমাদের সূর্যের মতাে নক্ষত্রে পরিণত হয়। এরা হাইড্রোজেন গ্যাস জ্বালিয়ে হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে, বিকিরণ করে তাপ ও আলাে । এর উদাহরণ অনেকটা বেলুনের মতাে-ভেতরে থাকা বাতাসের বাইরের দিকের প্রসারণ চাপ এবং বেলুনের রাবারের নিজস্ব টান (যা বেলুনকে ছােট করে ফেলতে চায়) একে অপরকে স্থির রাখে।

উত্তপ্ত গ্যাসের মেঘ একবার নক্ষত্র হয়ে গেলে তা বহু দিন ধরে স্থিতিশীল থাকে। এ অবস্থায় নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার তাপ ও মহাকর্ষীয় টান একে অপরকে ধরে রাখে। কিন্তু একসময় নক্ষত্রের হাইড্রোজেন ও অন্যান্য নিউক্লিয়ার জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলাে, শুরুতে একটি নক্ষত্রের যত বেশি পরিমাণ ভর থাকে, এটি তত তাড়াতাড়ি জ্বালানি ফুরিয়ে ফেলে। এর কারণ হচ্ছে, একটি নক্ষত্রের যত বেশি ভর থাকে এর মহাকর্ষীয় টানের সাথে ভারসাম্যে থাকতে একে তত বেশি উত্তপ্ত হতে হয় । আর নক্ষত্রটি যত বেশি উত্তপ্ত হবে তত দ্রুত গতিতে এর মধ্যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া হবে এবং তত দ্রুত এর জ্বালানি শেষ হবে। আমাদের সূর্যের কাছে যে জ্বালানি আছে তা দিয়ে এটি সম্ভবত আরও প্রায় পাঁচ বিলিয়ন (পাঁচশ কোটি) বছর চলতে পারবে । কিন্তু আরও বেশি ভরের নক্ষত্ররা একশ মিলিয়ন (দশ কোটি) বছরের মধ্যেও জ্বালানি ফুরিয়ে ফেলতে পারে। এই সময়টি আমাদের মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় অনেক ছােট্ট । | জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে নক্ষত্রটি আবার ঠাণ্ডা হতে শুরু করে । মহাকর্ষ। আবার বিজয়ী হয়। শুরু হয় সঙ্কোচন। এর ফলে পরমাণুরা একে অপরের সাথে জড়িয়ে যায়। এর ফলে নক্ষত্রটি আবার উত্তপ্ত হতে থাকে । উত্তাপ আরও বাড়লে এবার এতে হিলিয়াম থেকে আরও ভারী মৌল যেমন কার্বন বা অক্সিজেন উৎপন্ন হবে। এরপর কী হবে তা পুরােপুরি স্পষ্ট নয়। কিন্তু খুব সম্ভব, এর কেন্দ্রীয় অঞ্চল গুটিয়ে গিয়ে অতি ঘন অবস্থা যেমন ব্ল্যাকহােল বা কৃষ্ণ গহ্বর তৈরি করবে। ব্ল্যাকহােল শব্দটা নতুন।

আমেরিকান বিজ্ঞানী জন হুইলার ১৯৬৯ সালে শব্দটি তৈরি করেন। এর মাধ্যমে তিনি অন্তত দুই শ বছর আগের একটি ধারণার চিত্র তুলে ধরেন। এটা সেই সময়ের কথা যখন আলাে সম্পর্কে দুটো তত্ত্ব ছিল। একটি মত ছিল নিউটনের পছন্দনীয়। এই মত অনুসারে, আলাে কণা দিয়ে তৈরি ।। আরেকটি মতের বক্তব্য ছিল, আলাে তৈরি তরঙ্গ দিয়ে। এখন আমরা জানি, দুটো তত্ত্বই সঠিক। নবম অধ্যায়ে আমরা দেখব, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কণা-তরঙ্গের দ্বৈততায় (দ্বিমুখী আচরণ) আলােকে কণা ও তরঙ্গ দুই-ই মনে করা যায়। কণা ও তরঙ্গের ধারণাগুলাে আমরাই বানিয়েছি, এমন না যে। প্রকৃতির সব ঘটনা এর কোনাে একটির মতাে হতেই হবে। | আলােকে তরঙ্গ ধরে নিলে এটি মহাকর্ষের প্রভাবে কীভাবে কাজ করবে তা বােঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু আলােকে যদি আমরা কণায় তৈরি মনে করি, তাহলে এই কণারা কামানের গােলা, রকেট বা গ্রহদের মতােই মহাকর্ষ দ্বারা আকৃষ্ট হবে বলে আশা করা যায়। যেমন একটি কামানের গােলাকে পৃথিবীর বা কোনাে নক্ষত্রের পৃষ্ঠ থেকে ওপরে ছুড়লে (নিচের ছবিতে দেখুন) একসময় এটি থেমে যাবে। এরপর এটি আবার নিচে নামতে থাকবে। তবে একে একটি নির্দিষ্ট বেগের চেয়ে জোরে ছুড়ে মারলে ভিন্ন | কিছু ঘটবে (এটি আর ফিরে আসবে না)। এই নূ্যনতম বেগকে বলে মুক্তি বেগ । কোনাে নক্ষত্রের মুক্তি বেগ নির্ভর করে এর মহাকর্ষী টানের ওপর । ভর বেশি হলে মুক্তি বেগের মানও হয় বেশি। একসময় মানুষ ভাবত আলাের গতি হলাে অসীম। এর ফলে মহাকর্ষ একে কিছুতেই থামাতে পারবে না। কিন্তু রােমা সাহেব আলাের নির্দিষ্ট গতির কথা আবিষ্কার করলে বােঝা গেল, এর ওপর মহাকর্ষের প্রভাব থাকতেও পারে। নক্ষত্রের ভর যথেষ্ট বেশি হলে আলাের বেগও হবে এর মুক্তি বেগের চেয়ে কম । ফলে নক্ষত্র থেকে বের হওয়া যেকোনাে আলাে আবার এতেই ফিরে আসবে।

এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে ক্যামব্রিজের শিক্ষক জন মিচেল ১৭৮৩ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এটি লন্ডনের ফিলােসফিক্যাল ট্রানজেকশন অব দি রয়েল সােসাইটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি বলেন যে একটি নক্ষত্র যথেষ্ট আঁটসাঁট (আকারে ছােট) ও বেশি ভরবিশিষ্ট হলে এর শক্তিশালী মহাকর্ষের কারণে এর ভেতর থেকে আলাে বের হয়ে আসতে পারবে না । এর পৃষ্ঠ থেকে বের হওয়া যেকোনাে আলাে বেশি দূর যাবার আগেই এটার মহাকর্ষ তাকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসবে। এ ধরনের বস্তুদেরকে এখন আমরা ব্ল্যাকহােল বা কৃষ্ণগহ্বর বলি, কারণ এরা আসলেই তাই: মহাশূন্যের কালাে শূন্যতা ।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD