Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব-০৬

Sunday, 24 November 2019

/ by Admin

চিত্র : সম্প্রসারণশীল বেলুন মহাবিশ্ব (মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে সবগুলাে গ্যালাক্সি একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

সময় যেতে যেতে ফুলে ও ঋলভলভলঠা বেলুনের মতাে বেশি দূরত্বে থাকা গ্যালাক্সিরা কাছের গ্যালাক্সির চেয়ে দ্রুত সরে যায়। কাজেই যেকোনাে গ্যালাক্সির একজন দর্শক দেখবেন, একটি গ্যালাক্সি যত দূরে আছে তা তত দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে । ফ্রিডম্যান মহাবিশ্ব সম্পর্কে কেবল একটিমাত্র মডেল তৈরি করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাঁর অনুমান সঠিক হলে আইনস্টাইনের সমীকরণ অনুসারে সম্ভাব্য সমাধান পাওয়া যায় তিনটি । অর্থাৎ, ফ্রিডম্যানের মডেলেরই তিনটি আলাদা দিক আছে । মহাবিশ্বের থাকতে পারে তিনটি আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য।

প্রথম সমাধানে (যা ফ্রিডম্যান নিজে বের করেন) মহাবিশ্ব যথেষ্ট ধীরে প্রসারিত হচ্ছে, যার ফলে বিভিন্ন গ্যালাক্সির মহাকর্ষীয় টানের প্রভাবে প্রসারণের গতি একসময় কমে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত থেমে যাবে। এরপর গ্যালাক্সিরা একে অপরের দিকে এগিয়ে আসবে, সঙ্কুচিত হতে শুরু করবে মহাবিশ্ব। দ্বিতীয় সমাধানে মহাবিশ্ব এত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে যে মহাকর্ষীয় টান কখনােই একে থামাতে পারবে না, গতি একটু কমবে যদিও ।

আরেকটি সমাধান বলছে মহাবিশ্ব এমন একটি যথেষ্ট দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে যাতে সঙ্কোচন শুরুই না হতে পারে। গ্যালাক্সিরা যে গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে তা কমে যাচ্ছে, কিন্তু কখনােই তা শূন্য হবে না।

প্রথম ধরনের ফ্রিডম্যান মডেলের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হলাে, এটি অনুসারে মহাবিশ্ব অসীম নয় । কিন্তু আবার এর কোনাে সীমানাও নেই। মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যে স্থান গােলাকার হয়ে নিজের ওপরই বেঁকে আছে । একে পৃথিবীর পৃষ্ঠের সাথে তুলনা করা যায়। এটি অসীম নয়। ঠিকই, কিন্তু এর কোনাে সীমানাও নেই । আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনাে দিকে যেতে থাকেন, আপনি কখনােই অভেদ্য কোনাে বাধার মুখে পড়বেন না, বা প্রান্তে পৌঁছে গিয়ে পড়ে যাবার সম্ভাবনাও থাকবে না। শেষমেশ পৌঁছে যাবেন সেখানেই, যেখান থেকে শুরু করেছিলেন।

প্রথম মডেল অনুসারে স্থানের চরিত্র এমনই। অবশ্য পৃথিবীর পৃষ্ঠের দুই মাত্রার বিপরীতে এখানে মাত্রা আছে তিনটি । মহাবিশ্বকে পুরাে একবার ঘুরে এসে আগের জায়গায় পৌছার বিষয়টি সায়েন্স ফিকশনে ভালাে মানায়, বাস্তবে এর তেমন কোনাে গুরুত্ব নেই। কারণ, দেখানাে যায় যে আপনি পুরােটা ঘুরে ফিরে আসার আগেই মহাবিশ্ব গুটিয়ে গিয়ে জিরাে সাইজ হয়ে যাবে। এর সাইজ এত বড় যে পুরােটা ঘুরে আসতে হলে আপনাকে আলাের চেয়ে বেশি গতিতে চলতে হবে। কিন্তু তা অসম্ভব, যার ফলে আপনি ফিরে আসার আগেই মহাবিশ্ব শেষ হয়ে যাবে । ফ্রিডম্যান মডেলের দ্বিতীয় অংশেও বক্র স্থানের কথা আছে। এর চিত্র অবশ্য ভিন্ন। ফ্রিডম্যান মডেলের তৃতীয় অংশটিতেই কেবল বড়মাপের দৈর্ঘ্যে মহাবিশ্বের জ্যামিতি সমতল (যদিও বড় ভরের বস্তুদের আশপাশে স্থান বই থাকবে)।

ফ্রিডম্যানের কোন মডেলটি সঠিক? একসময় কি মহাবিশ্বের প্রসারণ বন্ধ হবে, নাকি চিরকাল এর প্রসারণ চলতেই থাকবে?
প্রশ্নটার উত্তর যে এতটা জটিল তা বিজ্ঞানীরা আগে বুঝতে পারেননি। এই প্রশ্নের মৌলিক উত্তর নির্ভর করে দুটি জিনিসের ওপর--মহাবিশ্বের প্রসারণের বর্তমান হার এবং বর্তমান গড় ঘনত্ব (একটি নির্দিষ্ট আয়তনে যে পরিমাণ পদার্থ উপস্থিত)। বর্তমানে প্রসারণের হার যত বেশি হবে, তাকে থামাতে তত শক্তিশালী মহাকর্ষের প্রয়ােজন হবে। এর জন্য গড় ঘনত্বের মানও হতে হবে বেশি। যদি ঘড় ঘনত্ব একটি নির্দিষ্ট সঙ্কট মানের (যা নির্ভর করে প্রসারণের হারের ওপর) বেশি হয়, তাহলে মহাকর্ষীয় টানের প্রভাবে প্রসারণ থেমে গিয়ে পতন শুরু হবে। এটাই হলাে ফ্রিডম্যানের প্রথম মডেল।


যদি গড় ঘনত্ব সঙ্কট মানের চেয়ে কম হয়, তাহলে প্রসারণ থামানাের মতাে যথেষ্ট মহাকর্ষীয় টান থাকবে না। কাজেই মহাবিশ্ব চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে। এটা হলাে ফ্রিডম্যানের দ্বিতীয় মডেল ।

আর গড় ঘনত্ব যদি সঙ্কট মানের ঠিক সমান হয় তবে মহাবিশ্বের প্রসারণ হার চিরকাল কমতে থাকবে। এটি দ্রুত একটি নির্দিষ্ট সাইজের কাছাকাছি হতে থাকবে, কিন্তু কোনাে দিনই সেই সাইজ পর্যন্ত পৌছবে না। এটা হলাে ফ্রিডম্যানের তৃতীয় মডেল ।

এর মধ্যে কোনটি ঘটবে? ডপলার প্রভাবের সাহায্যে আমরা অন্য গ্যালাক্সিদের আমাদের থেকে দূরে সরার বেগ মাপতে পারি। এর মাধ্যমে প্রসারণের বর্তমান হার জানা যাবে। খুব নির্ভুলভাবে এর মান বের করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলাে, গ্যালাক্সিদের দূরত্বের খুব বেশি সঠিক হিসাব জানা নেই। এদের দূরত্ব আমরা সরাসরি মাপতে পারি না। আমরা শুধু জানি যে প্রতি বিলিয়ন বছরে মহাবিশ্ব ৫ থেকে ১০ শতাংশ প্রসারিত হয়। অন্যদিকে মহাবিশ্বের বর্তমান গড় ঘনত্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আরও অস্পষ্ট । কিন্তু আমরা জানি আমাদের ও অন্যান্য গ্যালাক্সিতে যে পরিমাণ তারকা দেখি তাদের মােট ভর মহাবিশ্বের প্রসারণ থামানাের জন্যে যথেষ্ট নয়, প্রসারণের হারকে যতটা সম্ভব ছােট ধরে নিলেও। ভর উপস্থিত আছে প্রয়ােজনীয় ভরের একশ ভাগের মাত্র এক ভাগ।
কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়। আমাদের গ্যালাক্সিসহ অন্যান্য গ্যালাক্সিতে বিপুল পরিমাণ ডার্ক ম্যাটারও আছে। এদেরকে আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রদের কক্ষপথের ওপর এর মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এর উপস্থিতি আঁচ করা যায়। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ সম্ভবত আমাদের মিল্কিওয়ের মতাে সর্পিল গ্যালাক্সিগুলাের বাইরের দিকে অবস্থিত নক্ষত্রগুলাের বেগ । এ নক্ষত্রগুলাে যে তীব্র গতিতে গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তাতে গ্যালাক্সির নক্ষত্রদের মােট মহাকর্ষীয় টান এদেরকে কক্ষপথে ধরে রাখতে পারার কথা নয়।

উপরন্তু বেশির ভাগ গ্যালাক্সিকে গুচ্ছ গুচ্ছ (Cluster) আকারে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাই একইভাবে গ্যালাক্সিদের গতির প্রকৃতি দেখে আমরা এদের মাঝখানে আরও বেশি ডার্ক ম্যাটার আছে ধরে নিতে পারি ।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD