Responsive Ad Slot

সর্বশেষ

latest

বৃহস্পতির উপগ্রহই কি আমাদের পরবর্তী বাসস্থান?

Saturday 18 April 2020

/ by Admin

সৌরজগতের  আটটি গ্রহকে কেন্দ্র করে ১৫০ টিরও বেশি উপগ্রহ আবর্তন করছে। বিজ্ঞানীরা এখন এসব উপগ্রহের মধ্যে প্রাণের সন্ধান করছেন। এক্ষেত্রে বড় গ্রহের  বরফাবৃত উপগ্রহ গুলোতে প্রাণের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এসব উপগ্রহের  নিচের পৃষ্ঠে পানির সন্ধানের চেষ্টাও চলছে প্রচুর।



বৃহস্পতির উপগ্রহ ‘ইউরোপা’  বাসযোগ্য গ্রহের তালিকায় বেশ উপরেই আছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ১৯৭০ সালের নাসা’র ‘পায়োনিয়ার’-১০ এবং ১১  মহাকাশযানের অভিযান। বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ ইউরোপা , আইও, গেনিমেড এবং ক্যালিস্টো’র উপর বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধিৎসু চোখ অনেক আগে থেকেই  ছিল। পায়োনিয়ার-১০ আর ১১ মহাকাশ অভিযান থেকে প্রাপ্ত ডাটা থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন যে ইউরোপা, গেনিমেড, ক্যালিস্টো-এই তিন উপগ্রহের পৃষ্ঠে বরফ থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে..

১৯৭৯ সালে ভয়েজার-১ ও ২ বৃহস্পতির উপগ্রহ আইও এর পাশ দিয়ে যায়। এসময় প্রাপ্ত ছবি থেকে দেখা যায় আইও উপগ্রহটিতে আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এর মূল কারণ ছিল প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল, যা আইও উপগ্রহের অভ্যন্তরীণ অংশকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করলেন, এই প্রক্রিয়া ইউরোপা  গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে পানির  উৎপত্তি ঘটানোর জন্য সহায়ক হতে পারে। এই ধারণা আরও বেশি যুক্তিযুক্ত হয় যখন ভয়েজার ইউরোপা গ্রহের ছবি পাঠায়।  প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ডিম্বাকার ইউরোপা গ্রহের পৃষ্ঠে প্রচুর ফাটল রয়েছে। এ থেকে ভূতত্ত্ববিদরা বুঝতে পারলেন যে,  ইউরোপা-তে  থাকা বরফ খণ্ডগুলো ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এর কারণে সেখানে বাদামি বর্ণের তরল পদার্থ দেখা যায়।

তারপর পর এক দীর্ঘ অপেক্ষা! প্রায়  তিন দশক পর হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে  বিজ্ঞানীরা ইউরোপা  উপগ্রহে ‘গেয়সার’ দেখতে পেলেন।  প্রথমে ‘গেয়সার’ কি সেটা জেনে নিই। সহজ বাংলায় গেয়সার হল এক ধরণের অতি উত্তপ্ত গ্যাস মিশ্রিত তরল যা বিস্ফোরিত হয়ে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে বের হয়।  ২০১২ সালে হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এক ব্যতিক্রমী গেয়সার দেখতে পেলেন ইউরোপা উপগ্রহের  দক্ষিণ মেরুর অরুরা থেকে। অরুরা নিয়ে আর একদিন বলব। তবে এতটুকু বলে রাখি, অরুরা  আকাশে  রঙ বেরঙের  আলো যা সাধারণত  মেরু অঞ্চলে দেখা যায়। হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে গেয়সার এর এক বিশেষ ধরণের অরোরা   বিশ্লেষণ করা  হয়েছিল।  এরপর এই গবেষণা থেকে বের হয়ে আসল যে, ইউরোপা উপগ্রহের মেরু অঞ্চলে আণবিক অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন  রয়েছে।  এ থেকে ইউরোপা-তে পানি থাকার সম্ভাবনার অনুমান আরও ভিত্তি পেল।

এরপর বিজ্ঞানীরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এজন্য তারা এক বিশেষ ধরণের পদ্ধতি  অনুসরণ করলেন। হাবল টেলিস্কোপের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি বিশ্লেষণ ছিল এজন্য আদর্শ  পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অনুসরণের কারণে ইউরোপা উপগ্রহের পৃষ্ঠের উপরে গ্যাস মিশ্রিত তরলের  বিস্ফোরণ  আবারো পরিলক্ষিত হয়, যেখানে পূর্বে  অক্সিজেন আর হাইড্রোজেনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।  এভাবেই বিজ্ঞানীরা ইউরোপা উপগ্রহের উষ্ণ অঞ্চলগুলো শনাক্ত করলেন। আর এসব উষ্ণ অঞ্চলগুলোতেই পানি পাবার সম্ভাবনা সর্বাধিক। গ্যাস মিশ্রিত বিস্ফোরিত তরলের উচ্চতা  প্রায় ১২৫ মাইল। কে বলতে পারে, বরফ খণ্ডের নিচে থাকা কোন সাগর হয়তোবা এসব বিস্ফোরণের উৎপত্তিস্থল!

এবার আলোচনা করব সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ ‘গ্যানিমেড’ নিয়ে।  আচ্ছা  চিন্তা করে দেখুন তো, সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ কত বড় হতে পারে? একটা গ্রহের সমান কি হতে পারে? কি, চিন্তায় পড়ে গেলেন? আচ্ছা তাহলে জেনে নিন। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ ‘গ্যানিমেড’ বুধ গ্রহের চেয়ে তিন গুণ বড় এবং মঙ্গল গ্রহের প্রায় তিন ভাগের চার ভাগ!

শুনলে অবাক হতে পারেন, বাসযোগ্য উপগ্রহের তালিকায় অনেক উপরেই আছে গ্যানিমেড এর নাম। বৃহস্পতি গ্রহকে  প্রদক্ষিণ করে  গ্যানিমেড উপগ্রহ। গ্রহ না হলেও এর রয়েছে গ্রহের  মত কিছু বৈশিষ্ট্য। আয়রনের স্তরকে আবৃত করে রেখেছে পাথরের একটি স্তর।  বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, সবচেয়ে  উপরের বরফের স্তরের নিচে লবণাক্ত পানির স্তর থাকতে পারে। এ কারণে এখানে জীবনের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না।

১৯৯৬ সালে বিজ্ঞানীরা  হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম গ্যানিমেড উপগ্রহের উপরে বিষাক্ত অক্সিজেনের সন্ধান পান।  গ্যানিমেড এর বায়ুমণ্ডল অনেক পাতলা।  বৃহস্পতি গ্রহের শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে গ্যানিমেড উপগ্রহে বৃষ্টি হয়।  বৃষ্টিতে পানির অণু ভেঙ্গে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে পরিণত হয়।  গ্যানিমেড এর বায়ুমণ্ডল পাতলা হবার পেছনে এটাও একটা কারণ।

সে সময়  নাসা তাদের   গ্যালিলিও মহাকাশযানের সাহায্যে  গ্যানিমেড  উপগ্রহের উপরের পৃষ্টে থাকা বরফাবৃত  সমভূমি আর পর্বতের সন্ধান পেয়েছিল। সেখান থেকে এটা অনুমান করে বলা যায় যে, গ্যানিমেড এর পৃষ্ঠতলের নিচে অবস্থিত  লবণাক্ত তরল সময়ের সাথে-সাথে  ঠাণ্ডা হয়ে বরফাবৃত পৃষ্ঠ তৈরি করেছে। ২০০২ সালে নাসা গ্যানিমেড  উপগ্রহে  চৌম্বক ক্ষেত্রের সন্ধান পায়। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রমাণ গ্যানিমেডের নিচের  পৃষ্ঠে  থাকা  লবণাক্ত তরলের সমুদ্র থাকার সম্ভাবনাকে আরও  দৃঢ় করে।   অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে,  লবণাক্ত তরল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কিভাবে নিশ্চিত হলেন? গ্যানিমেড  উপগ্রহের  উপর  নাসা গ্যলিলিও মহাকাশযানের মাধ্যমে অবলোহিত  রশ্মির একটা পরীক্ষা চালায়। সে পরীক্ষার  মাধ্যমে  বিজ্ঞানীরা গ্যানিমেড  উপগ্রহের পৃষ্ঠে খনিজ লবণ জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি  শনাক্ত করেন।

২০১৫  সালে নাসা হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে  গ্যানিমেড এর পৃষ্ঠতলের নিচে অবস্থিত  লবণাক্ত তরল সাগর সম্পর্কে আরও একটা বড় প্রমাণ পায়।  প্রমাণ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলা যাক। বৃহস্পতি গ্রহের  শক্তিশালী চৌম্বক  ক্ষেত্র  রয়েছে, এর প্রভাবে গ্যানিমেড উপগ্রহের মেরুপ্রভার কোণ  হবার কথা ছিল ৬ ডিগ্রি । কিন্তু  বিস্ময়করভাবে দেখা যায় গ্যানিমেডের  মেরুপ্রভার কোণের পরিমান ২ ডিগ্রি।  এর মূল কারণ হল, গ্যানিমেড এর পৃষ্ঠতলের নিচে অবস্থিত  লবণাক্ত তরল সাগরের একটা নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র আছে যেটা একটা মাধ্যমিক চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। গ্যানিমেডের মাধ্যমিক চৌম্বক ক্ষেত্র  বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মেরুপ্রভা আবার  চৌম্বক ক্ষেত্রের উপরে নির্ভরশীল। তাই চৌম্বক ক্ষেত্রের  সংঘর্ষের কারণে বিজ্ঞানীরা  গ্যানিমেডের মেরুপ্রভার কোণ পেয়েছিলেন ২ ডিগ্রি। যদি গ্যানিমেড  পৃষ্ঠের নিচে লবণাক্ত সাগর না থাকত তবে চৌম্বক ক্ষেত্রের সংঘর্ষ হত না। মেরুপ্রভাও তখন  ৬ ডিগ্রি পাওয়া যেত।

এ প্রমাণের  পর  গ্যানিমেডের পৃষ্ঠতলের নিচে অবস্থিত  লবণাক্ত তরল সাগর সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আর কোন সংশয় রইল না। বিজ্ঞানীদের মতে গ্যানিমেড এর অভ্যন্তরীণণ  লবণাক্ত তরল সাগরের গভীরতা প্রায়  ৬০ মাইল, যা পৃথিবীর সাগরের গভীরতার চেয়ে ১০ গুণ বেশি!  আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী পর্ব নিয়ে ফিরে আসব শীঘ্রই।

No comments

Post a Comment

Don't Miss
© all rights reserved.
Made with by Science Tech BD